ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লিচুবাগান কিনে লোকসানে পাইকাররা

লিচুবাগান কিনে লোকসানে পাইকাররা

প্রতিকূল আবহাওয়ায়

স্বাদে রসে ভরপুর সোনারগাঁয়ে লিচু। দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে সোনারগাঁয়ে লিচু বাজারে আসে সবার আগে। সে জন্য চাহিদাও থাকে বেশি। বাজারে চাহিদা বেশী থাকার কারণে বাগান মালিক ও পাইকারদের কাছেও থাকে এ লিচুর কদর। সে কারণে দেশের অন্যান্য এলাকার লিচুর ন্যায় সোনারগাঁয়ের লিচুর চাহিদা ও দামও বেশী থাকে। চাহিদা ও দাম বেশী থাকার কারণে ফুল থেকে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গে পাইকাররা বাগান কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বাগানগুলোতে। কে কার আগে বেশী দাম দিয়ে বাগান কিনে রাখবে শুরু হয় সে লড়াই। সে কারণেই এবার লিচুর বাজারে ধস। বছর ধরে বাগানগুলো পরিচর্যা করার পরও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবার লাভের আশায় কেনা পাইকারদের লিচু বাগানগুলো বিক্রি করতে হচ্ছে লোকসানে।

বাগান মালিকরা জানান, প্রতিবছর লিচু শেষ হওয়ার পর পরই তারা স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী বাগানগুলো পরিচর্যা শুরু করেন। সঠিক সময়ে সার, কীটনাশক ও পানি দিয়ে গাছগুলোকে পরিচর্যা করেন। গাছে ফুল শেষ হয়ে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে মুকুলগুলোতে কীটনাশক ছিটানো হয় যাতে মুকুলগুলো ঝরে না পরে ও পোকা মাকড়ে নষ্ট না করতে না পারে। এতো যত্ন নেয়ার পরও মুকুল আসার পর সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে লিচু ফুলতে না পেরে ছোট ও সবুজ থাকতেই পাকা শুরু করে। সঠিক সময় বৃষ্টি না এসে লিচু যখন ছোট থাকতে পাকা শুরু করেছিল ঠিক সে সময় হঠাৎ বৃষ্টি আসার কারণে লিচুতে পোকার আক্রমণ ও ঝরে পড়া শুরু করে। এতে বাগান মালিক ও পাইকাররা তাড়াহুড়া করে লিচু ভাঙ্গার কারণে এবার লিচুতে লোকসান গুনতে হয়েছে বাগান মালিক ও পাইকারদের। লিচু পরিপক্ক না হওয়ার কারণে রসালো ও মিষ্টি না হওয়ায় বাজারেও লিচু চাহিদা ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় খুবই কম। এর কারণে মাথায় হাত পড়েছে লিচু সংশ্লিষ্টদের।

লিচু ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির জানান, তিনি প্রতি বছর ৪ থেকে ৫টি লিচু বাগান কিনেন। গত দুই বছর করোনা ভাইরাসের কারণে লিচুর ফলন ভালো হওয়ার পরও তেমন দাম পাননি। এবার করোনা ভাইরাস না থাকায় ও রোজার পর লিচু বাজারে আসবে সে কারণে ভালো দাম ও লাভের আশায় আগে ভাগেই বাগান কিনে রেখেছিলেন। তবে সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে লিচু না ফুলার কারণে ও প্রচণ্ডরোদে লিচু ছোট থাকতেই রং আসতে শুরু করে। এদিকে রং আশার পর হঠাৎ করে বৃষ্টি হওয়ার কারণে লিচুতে পোকার আক্রমণ শুরু হয়। সেজন্য তাড়াহুড়ো করে লিচু ভাঙ্গতে শুরু করেন। লিচু ঠিক মতো পরিপক্ক ও রসালো না হওয়ার কারণে এবার ক্রেতারা লিচু থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। প্রতি বছর যে দেশি পাতি লিচু ৩ থেকে ৪ শত টাকায় বিক্রি করা হতো সে লিচু এবার আড়াইশ থেকে ৩শ’ টাকায় বিক্রি করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে বাগান প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুনিরা আক্তার জানান, সোনারগাঁ উপজেলার প্রায় ১ হাজার লিচু বাগান রয়েছে। প্রতিটি লিচু বাগান আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা তদারকির মাধ্যমে পরিচর্যা করেন। এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচুর জন্য যে সময় বৃষ্টি দরকার ছিল সে সময় বৃষ্টি না হওয়ার কারণে লিচু ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ফলে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা এবার লিচুতে লোকসান গুনতে হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন