ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক যুগে হয়নি এক ইঞ্চিও

এক যুগে হয়নি এক ইঞ্চিও

যশোরের নাভরণ থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সুন্দরবনের কোলের ইউনিয়ন মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত ৯৮ দশমিক ৪২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজ গত এক যুগে এক ইঞ্চিও অগ্রসর হয়নি। গত ২০১০ সালের ১০ জুলাই শ্যামনগরে আইলা ক্ষতিগ্রস্ত জনপদ পরিদর্শনে এসে আয়োজিত এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথ নির্মাণের ঘোষণা দেন। যে রেলপথ চালুর মাধ্যমে সুন্দরবন এবং প্রত্ননিদর্শন দেখার জন্য দেশি বিদেশি পর্যটকদের পদচারণা বৃদ্ধি পাবে। আর যোগাযোগ সুবিধা বাড়লে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং রপ্তানি বাড়ার পাশাপাশি জনগণের জীবনমান উন্নয়ন হবে বলে আশা করা হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণার পর এক যুগ পেরিয়ে গেলেও নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি।

এক সময় সুন্দরবন উপকূলীয় সাতক্ষীরা অঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌপথ। প্রাকৃতিক কারণে নদী-খাল-চ্যানেলগুলি নাব্য হারিয়ে প্রায় অচল হয়ে পড়ায় চালু হয় সড়ক ব্যবস্থা। এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি ছাড়াও বাস্তবতা উপলব্ধি করেই সে সময় প্রধানমন্ত্রী নাভরণ-মুন্সিগঞ্জ রেলরুট নির্মাণের ঘোষণা দেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা পরপরই জরিপ, ভূমি অধিগ্রহণ স্টেশন, ব্রিজ কালভার্টের স্থান নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় কাজ শুরু হয়। দ্রুত শুরু হওয়া এই কাজ এক সময় হঠাৎ করেই থেমে যায়। গত এক যুগ ধরে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সুন্দরবন উপকূলীয় অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।

উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার অন্যতম কৃষিজ সম্পদ ‘সাদা সোনা’ (চিংড়ি)। আরো রয়েছে ধান, আম, কুল, সুন্দরবনের মধু, বঙ্গপোসাগর উপকূলীয় নদ-নদীর এবং ঘেরের সাদা মাছ, সুন্দরবনের কাঠ ও নানা রপ্তানিযোগ্য সমৃদ্ধ সম্পদ। রেলপথ হলে এসব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। জেলার একমাত্র স্থলবন্দর ভোমরা যথেষ্ট অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। তাছাড়া বিশ্ব ঐতিহ্যের সুন্দরবন এ জেলার প্রধান আকর্ষণ। কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা, কালিগজ্ঞ, শ্যামনগর জুড়ে ছড়িয়ে আছে প্রাচীন ও মধ্যযুগের অসংখ্য ঐতিহাসিক প্রত্ন-নিদর্শন। যা দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু, আত্ম-জিজ্ঞাসু মানুষকে আকর্ষণ করে।

রেলপথ বিভাগের সূত্রমতে, নাভরণ থেকে মুন্সিগঞ্জ গ্যারেজ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ-প্রকল্পে প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৬৬২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩৩২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। নাভারণ থেকে মুন্সীগঞ্জ অবধি আটটি স্টেশন থাকে। এগুলো হলো- নাভারন, বাগআঁচড়া, কলারোয়া, সাতক্ষীরা, পারুলিয়া, কালীগঞ্জ, শ্যামনগর ও মুন্সীগঞ্জ। একইসঙ্গে রেলপথের সেতু নির্মিত হবে বাঁকাল, লাবণ্যবতী, সাপমারা খাল ও কাকশিয়ালী নদীর ওপর।

‘কনস্ট্রাকশন অব নিউ বিজি ট্র্যাক ফর্ম নাভারন টু সাতক্ষীরা’ প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ৩২৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা চীনের কাছে থেকে ঋণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। মোট ৯৮ দশমিক ৪২ কিলোমিটার দৈর্ঘের প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৪ সাল অবধি। বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দবিহীন নতুন প্রকল্পের তালিকায় এটা রাখা হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছর শেষে আসছে নতুন বাজেট। নতুন অর্থবছরের বাজেটে প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করতে জোর দাবি তুলেছেন জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ।

উপকূলীয় উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন বলেন, মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ উপজেলা মানুষের দুঃখ কষ্ট বোঝেন বলে এই প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। এ অঞ্চলে মানুষের জীবনমান ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে এই রেলপথ নির্মাণকাজ খুব দ্রুত শুরু হওয়া দরকার।

শ্যামনগর উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহুরুল হায়দার বাবু বলেছেন, মানুষের কল্যাণে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেয়া এই রেলপথ নির্মাণ খুব দ্রুত শুরু করা প্রয়োজন। কারণ দ্রুত এই রেলপথ নির্মাণ হলে উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরে শুরু হয়ে যাবে মহাকর্মযজ্ঞ। সৃষ্টি হবে উন্নয়ন তৎপরতা, খুলে যাবে কর্মসংস্থানের দরজা।

সংবাদটি শেয়ার করুন