ঢাকা | বুধবার
১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গভীর নলকূপে বাড়ছে বিপদ

গভীর নলকূপে বাড়ছে বিপদ
  • অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের প্রভাব

দেশে কোনো ধরণের বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই পানি উত্তোলনে বেড়েই চলেছে গভীর নলকূপের সংখ্যা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের তথ্যমতে, সেচের জন্য স্যালো মেশিনের সংখ্যা ১৯৮৫ সালে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮০০ থাকলেও ২০০৬ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ লাখ ৮২ হাজার ৫২৫টিতে। সবশেষ ২০১৯ সালে তা ১৬ লাখে পৌঁছে যায়। এসবের প্রভাব পড়েছে প্রাণ-প্রকৃতির ওপর।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, বেশি পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে দেশের ২৪ শতাংশ ভূমি আর্সেনিক, লবণাক্ততা এবং ভূগর্ভস্থ পানি ফুরিয়ে যাবার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকারের পানি বিধি ২০১৩-এর আলোকে যে কোনো এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির সর্বনিম্ন আহরণ স্তর নির্ধারণ করে সুরক্ষা প্রদানে যে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা বলা আছে।

পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফর্মেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)-এর নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খাঁন বলেন, দেশে পানি ব্যবহারের অনেক পালিসি আছে। তবে এসবের বাস্তবায়ন নেই। পানি সীমিত, কিন্তু চাহিদা বাড়ছে। তাই কার্যকারিতা বাড়াতে হবে। তিনটি আর নিয়ে কাজ কারার কথা বলেন তিনি। এসব হলো- রিইউজ, রিসাইকেল, রিডিউজ।

ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পর্যবেক্ষণে পানি উন্নয়ন বোর্ড সারাদেশে ১২৭২টি কূপের মাধ্যমে ৫ দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছে। উপকূলীয় ১৯ জেলায় ১১শ ফিট পর্যন্ত মনিটরিং কূপ রয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, অতিরিক্ত আহরণ এবং সে তুলনায় ভূগর্ভে পানি রিচার্জ না হওয়ায় প্রতিবছর পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে আশঙ্কাজনকহারে পানির স্তর স্থায়ীভাবে ফুরিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় পানি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূ-গর্ভস্থ পানি বিভাগের পরিচালক ড. আনোয়ার জাহিদ মনে করেন, সাভার-গাজিপুরে শিল্পকারখানায় ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার আর সুযোগ নাই। সেক্ষেত্রে শিল্প-কারখানা নদীর পাশে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ এ বিশেষজ্ঞের।

প্রকৃতির ওপর প্রভাব
পানি দিবসের আলোচনায় উপস্থাপিত প্রেজেন্টেশেনে বুয়েটের পানি ব্যবস্থপনা বিভাগের প্রফেসর ড. মাসফেকুস সালেহীন বলেন, ভূ-গর্ভস্থ পানি কি অসীম? ভূ-গর্ভস্থ পানি মাত্র শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ। যেখানে সারফেস ওয়াটার শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য ৯ শতাংশ। কিন্তু ভূ-গর্ভস্থ পানি মানুষ অতিরিক্ত ব্যবহার করেছে। ফলে পানির টেবিল ৮ মিটার পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। এই হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা ১৯৯৮ সালের ৪ শতাংশের তুলনায় ২০১২ সালে তা ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

সেচ বা শিল্পের জন্য অতিরিক্ত পানি উত্তোলন করলে তা আশেপাশের মানুষের খাওয়ার জন্য পানি সরবরাহে প্রভাব ফেলে। শুধু মানুষের ব্যবহারের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানি নয়, বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্যও বজায় রাখে এ পানি। এটার অতিরিক্ত আহরণের ফলে বিশ্বব্যাপী নদীর প্রবাহ কমে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ পানির ভারসাম্যও বিঘ্নিত হচ্ছে। অথচ জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯- তে ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ পানির ভারসাম্য ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। ফলে কোনো এলাকায় বেশি পরিমাণ ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে তা গবেষণার মাধ্যমে চিহ্নিত করার সময় এসেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা ব্যবহার এবং ভূ-গর্ভে পানি রিচার্জ করার মতো অবকাঠামো তৈরির কথা ভাবতে বলছেন তারা। যেখানে শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহারের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যাংক হিসেবে জমা থাকবে। এক্ষেত্রে শিল্প ক্ষেত্রে পানি পলিসি এবং ইরিগেশন পলিসি-২০১৭ থাকলেও এসবের বাস্তবায়নের এখনই সময় বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন