ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মন্দায় পুঁজিবাজার, গতি বাড়ছে পতনে

পুঁজিবাজার

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গতকাল সোমবার লেনদেন কমে ৫শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। এদিন বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। সব ধরনের সূচকও কমেছে।

‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাদের বিগত উন্নয়নকে পুঁজি করে আশা করেছিল রোজার মাসে লেনদেনে দেড়-দুই হাজার কোটি টাকায় যাবে। তাদের সেই আশা উল্টো গতিতে চলছে। লেনদেন বর্তমানে ৫শ কোটি টাকার ঘরে।

এদিকে, রেগুলেটরদের সব প্রত্যাশার উল্টো গতিতে পুঁজিবাজার। তাদের নেওয়া পুঁজিবাজারের বিভিন্ন উন্নয়ন গতি সুফল বয়ে আনছে না। টানা মন্দা লেনদেনে পুঁজি হারাচ্ছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বলে জানান প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

হঠাৎ করেই চলতি বছরের গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে চলে এসেছিল। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাজার কোটি টাকায় লেনদেন ওঠলেও তা ধরে রাখতে পারেনি। পরের কার্যদিবস থেকে ফের হাজার কোটি টাকার নিচে নেমেছিল। লেনদেন কমে ৬শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। ঘুরে দাঁড়িয়ে ১০ মার্চ হাজার কোটি টাকা ঘরে চলে এসেছিল। পরের দিন লেনদেন ফের হাজার কোটি টাকার নিচে। ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৫ মার্চ হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন ফিরে। সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। পরেরদিন লেনদেন ৮শ কোটি টাকার ঘরে অবস্থান ছিল।

পরের দুই কার্যদিবস লেনদেন ৯শ কোটি টাকার ঘরে থাকলেও বুধবার ৮শ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছিল। পরেরদিন বৃহস্পতিবার লেনদেন এগারশ কোটি টাকার ঘরে ওঠে এসেছিল। এরপর গত রবিবার লেনদেন ৮শ কোটি টাকা, সোমবার ৬শ কোটি টাকা, মঙ্গলবার ৫শ কোটি টাকা, বুধবার ৪শ কোটি টাকা, বৃহস্পতিবার ৫শ কোটি টাকা এবং চলতি সপ্তাহের রবিবার ৬শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। সেখান থেকে লেনদেন গতকাল সোমবার ৫শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে।

এদিন ডিএসইতে ব্যাংক, সিরামিক, ইঞ্জিনিয়ারিং, খাদ্য আনুষঙ্গিক, বিমা, আইটি, বিবিধ, ওযুধ রসায়ন, সেবা আবাসন, বস্ত্র এবং ভ্রমন অবস খাতের অধিকাংশ খাতের শেয়ার দর কমেছে। এদিন পাট এবং টেলিকম খাতের অধিকাংশ খাতের শেয়ার দর বেড়েছে। এছাড়া সিমেন্ট, নন ব্যাংকিং আর্থিক, জ্বালানি শক্তি, পেপার, ফান্ড এবং চামড়া খাতের খাতের খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার উত্থান পতনে মিশ্রাবস্থায় রয়েছে। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর এ ধরনের অধিকাংশ খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন না বিনিয়োগকারীরা বলে জানায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

ডিএসইতে এদিন লেনদেন হয়েছে ৫৫৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কার্যদিবস রবিবার ৬৪৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন লেনদেন হওয়া ৩৮১টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৯১টির, কমেছে ২৩৪টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৫৬টির। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৩ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৩৮ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৬ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৫ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট বকমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৫১ দশমিক ৯১ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪৫৪ দশমিক ৭৫ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে আইপিডিসি ফাইন্যান্স শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে ডিএসইতে কোম্পানিটি শেয়ার স্থান পেয়েছে। এদিন ডিএসইতে আইপিডিসির ৬৪ কোটি ৮৬ হাজার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো ১৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা, সোনালী পেপার ১৯ কোটি ৭ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ১৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং জেনেক্স ইনফোসিস ১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, নাহি এ্যালুমিনিয়াম ১৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, ফরচুন সুজ ১২ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং ওরিয়ন ফার্মা ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সোমবার লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর আগের কার্যদিবস রবিবার লেনদেন হয়েছিল ১৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৭৯টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৮২টির, কমেছে ১৫৯টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৩৮টির।

এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৪৯ দশমিক ১৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৪৯৫ দশমিক ১১ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ৪ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ২৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, সিএসসিএক্স সূচক ২৯ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ২ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৪৬ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে, ১৪ হাজার ৯৩ দশমিক ২৫ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৬৯৬ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২৩৩ দশমিক ৬০ পয়েন্টে।

এদিন ওরিয়ন ফার্মা শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে সিএসইতে কোম্পানিটি শেয়ার স্থান পেয়েছে। এদিন সিএসইতে ওরিয়ন ফার্মা ৩ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এদিন সিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্যারামাউন্ট টেক্টটাইল ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, সাইফ পাওয়ারটেক ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, ডেফোডিল কম্পিউটার ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, সী পার্ল ১ কোটি ১৭ লাক টাকা, বেক্সিমকো ১ কোটি ১০ লাখ টাকা, জিএসপি ফাইন্যান্স ১ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং বিএসআরএম ৮২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন