“মেয়েদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তুলিতে হইবে, যাহাতে তাহারা ভবিষ্যৎ জীবনে আদর্শ গৃহিণী, আদর্শ জননী এবং আদর্শ নারীরূপে পরিচিত হইতে পারে।” সমাজে পরিবর্তন ঘটাতে হলে প্রয়োজন একজন সমাজসংস্কারকের। আর বেগম রোকেয়া ছিলেন দুরদর্শী একজন সমাজসংস্কারক।
নারীদেরকে অন্ধকার কূপ থেকে টেনে আনতে যিনি সবার আগে নিজের হাত কূপের দিকে বাড়িয়েছিলেন, তিনি হলেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, যাঁকে আমরা সবাই ‘বেগম রোকেয়া’ নামেই জানি। তাঁকে ‘বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত’ বলা হয়।
আজ ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মদিন। ১৮৮০ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। দিনটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।
১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দে এক জমিদার পরিবারে রোকেয়ার জন্ম হয়। রোকেয়া খাতুন, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, মিসেস আরএস হোসেন নামেও লিখতেন এবং পরিচিত ছিলেন তিনি। ঊনবিংশ শতকে নারীরা যখন অবরোধবাসিনী, সেই সময়ে নারীর পরাধীনতার বিরুদ্ধে তিনি আওয়াজ তুলেছেন।
আবার তিনি কখনোই পুরুষকে ছোট করে দেখেননি। তাই তো তিনি লিখেছিলেন, “আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ, আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কীরূপ? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে। তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্য তাহাই।”
তিনি বলেন, “দেহের দু’টি চক্ষুস্বরূপ, মানুষের সবরকমের কাজকর্মের প্রয়োজনে দু’টি চক্ষুর গুরুত্ব সমান।”
তিনি নারী ও পুরুষকে একটি গাড়ির দু’টি চাকার সাথে তুলনা করেছেন। কেননা একটি চাকা ছাড়া পুরো গাড়িটাই অচল। তাই নারী ও পুরুষ যদি মিলেমিশে কাজ করে, তাহলে সমাজে পরিবর্তন আসবেই। সমাজের অর্ধেক অংশকে বাদ দিলে কখনোই রাষ্ট্রের উন্নতি হবে না। তাই তো তিনি ছিলেন সমতায় বিশ্বাসী।
আনন্দবাজার/ইউএসএস