প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মনুষ্য সৃষ্ট ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন কবলিত হিজলা উপজেলা সদর রক্ষা, ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদান ও ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব ও স্মৃতিস্থলের স্বীকৃতি, মর্যাদা দান ও রক্ষার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
শনিবার (২ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১ টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মলেন এসব দাবির পক্ষে লিখিতি বক্তব্য পাঠ করেন হিজলা উপজেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল আলম দুলাল। এসময় তার সাথে ভাষা সৈনিক নায়েব আব্দুল কুদ্দুস ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বেজ কমান্ডার আব্দুর রশিদ সিকদারসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল আলম দুলাল বলেন, ব্রিটিশ ভারত তথা ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা, রাজনীতি থেকে কৃষক বিদ্রোহ, কৃষক-প্রজা স্বত্ত্ব-স্বদেশী আন্দোলন, ভাষা, শিক্ষা, ৬ দফা, ৬৯’র এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০’এর জাতীয় নির্বাচন তথা স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা ও ‘৭১’র মুক্তিযুদ্ধে বরিশাল জেলা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তম্মধ্যে উত্তর বরিশাল তথা সাবেক বরিশাল সদর উত্তর মহকুমাস্থিত এলাকা বা অঞ্চল (হিজলা, মুলাদী, মেহেন্দিগঞ্জ ও কাজিরহাট প্রভৃতি উপজেলা ও থানা সমন্বিত) অপেক্ষাকৃত সবচেয়ে বেশি অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণকারী হিসাবে সর্বজনবিদিত ও সর্বজ্ঞাত এবং স্বীকৃত। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় উত্তর বরিশালে হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ , কাজিরহাট, মুলাদী এলাকা প্রায় ১৪টি নদী বিধৌত- বেষ্টিত একটি বিচ্ছিন্ন এলাকা। সেই এলাকা আজ নদী ভাঙ্গনের করুণ শিকার। হিজলা উপজেলা আজ একটি বিপন্ন জনপদ হিসাবে দেশের প্রশাসনিক, ভৌগলিক ও রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়া, সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে হিজলা ও কাজিরহাট থানার বিভিন্ন এলাকা করাল গ্রাসী রাক্ষুসে মেঘনা, তার শাখা ও উপ-শাখা নদীভাঙ্গন কবলিত হয়ে নিশ্চিহ্ন ও বিধ্বস্ত। ফলে চরম শঙ্কা ও অসহায়ত্ব নিয়ে অত্র এলাকার অধিবাসীরা জীবন যাপন করে দিগভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। কারণ, আজ হিজলা উপজেলা সদর দপ্তর থেকে নদী ভাঙ্গনের অবস্থান অনুমান ১০০ গজ দূরে অবস্থিত। যেকোন মুহুর্তে কাউরিয়া-মুলাদী খাল ও লতা নদীতে ভাঙ্গনের মূল স্রোত প্রবেশ করতঃ হিজলা উপজেলা সদরসহ। কাজিরহাটের বিস্তির্ণ এলাকা বিলীন হতে পারে।
তিনি বলেন, কিন্তু অতীব চরম দুঃর্ভাগ্য ও পরিতাপের বিষয়, অদ্য পর্যন্ত নদী ভাঙ্গনের হুমকিতে পতিত হিজলা উপজেলা সদর দপ্তর, অর্থ, বাণিজ্য, শিল্প ও সামাজিক স্থাপনা রক্ষায় নুন্যতম কোন প্রয়াস স্থানীয় জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় সরকার থেকে নেওয়া হয় নাই। এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তা, জনপ্রতিনিধি ও মন্ত্রী পর্যায়ের কোন ব্যক্তিত্ব উক্ত এলাকা পরিদর্শন করেন নাই বা প্রয়োজন বোধও করেননি। ইতিপূর্বে আমাদের উত্তর বরিশালের হিজলা উপজেলার উত্তর সীমান্তবর্তী কয়েক হাজার একর ভূ-সম্পত্তি কয়েকটি ইউনিয়ন-মৌজাসহ প্রতিবেশী জেলা ও বিভাগসমূহে অবৈধভাবে কেটে নিয়ে গ্রাস করা হয়েছে। তৎসম্পর্কে প্রায় একযুগ আগে আপনাদের মাধ্যমে কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েও দেশের তৎকালীন সরকার প্রধানকে অবগত করেও অজ্ঞাত কারণে প্রতিকার পাইতে ব্যর্থ হয়েছি। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায় থেকে কোন উদ্যোগ অদ্য গ্রহণ করা হয়নি।
আজও আমাদের এলাকার একজন প্রখ্যাত ভাষা সৈনিক নায়েব আব্দুল কুদ্দুস, প্রখ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা বেজ কমান্ডার আব্দুর রশিদ সিকদার, মরহুম আবুল বাশার মুক্তা, ৯ম সেক্টরের ৩নং সাব-সেক্টরস্থ সর্বশেষ যুদ্ধঘাটি স্থল, শহীদান সংগঠক আব্দুল মান্নান মাষ্টার, সনদ বর্জনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ‘৭৫’র ১৫ই আগষ্ট উত্তর কালে একজন প্রতিবাদী সংগঠক হিসাবে হিজলায় বঙ্গবন্ধুর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী দেশের মাটিতে একমাত্র আনুষ্ঠানিক ভাবে পালনকারী সংগঠক, মাহাবুবুল আলম দুলাল, মরহুম আঃ রাজ্জাক খান, দাত্রী সংগঠক মনোয়ারা বেগম এবং ঐতিহাসিক অনেক স্মৃতিস্থল হওয়া সত্ত্বেও অদ্য পর্যন্ত যথাযথ সম্মান, স্বীকৃতিদান ও রক্ষার্থে বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বাধীন সরকারের বরাবরে বার বার প্রশাসনিক সুপারিশসহ যথাবিহীত লিখিত দাবী করা সত্ত্বেও অদ্য পর্যন্ত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নাই। তাই সরকারের আশুদৃষ্টি আকর্ষণসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।
অন্যথায় আগামী ঈদুল ফিতর উত্তরকালে গণতান্ত্রিক পন্থায় নিয়মতান্ত্রিক ভাবে শান্তিপূর্ণ সকল বৈধ পদক্ষেপ গ্রহণসহ সর্বশেষ নৌ-পথ অবরোধের মত বিক্ষুদ্ধ জনগণ অংশগ্রহণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করিতে এলাকাবাসী বাধ্য হবেন। যার সকল দায়-দায়িত্ব বরিশাল জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের উপর বর্তাবে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ভাষা সৈনিক নায়েব আব্দুল কুদ্দুস, বীর মুক্তিযোদ্ধা বেজ কমান্ডার আব্দুর রশিদ সিকদারকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়।
আনন্দবাজার/শহক