বান্দরবান সদর হাসপাতাল
- জনবল সংকট ও অব্যবস্থাপনায় মিলছে না কাঙ্খিত সেবা
বান্দরবান জেলা সদরে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে জনবল সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে সাধারণ রোগীরা কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখানে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট রয়েছে। পাশাপাশি ময়লা আবর্জনায় নোংরা হাসপাতালের পরিবেশ। এতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সেবা নিতে আসা রোগীরা। পর্যাপ্ত জনবল ও চিকিৎসকের অভাবেই এ দুরঅবস্থা বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ২০০৫ সালে ৫০ থেকে ১০০ শয্যার হাসপাতালে উন্নিত করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালকে। তবে শয্যাসংখ্যা বাড়ানো হলেও বাড়েনি জনবল। ৫০ শয্যার জনবল নিয়েই চালানো ১০০ শয্যা।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের চারপাশে রয়েছে নোংরা পরিবেশ ও ময়লার স্তুপ। শুধু বাইরে নয়, ভেতরেও একই অবস্থা। বাথরুম থেকে শুরু করে রোগীদের থাকার ওয়ার্ডও ভরে আছে ময়লা আবর্জনায়। দেয়ালে বৃষ্টির পানিতে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। জেলা সদরের একমাত্র সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন শতাধিক রোগী সেবা নিতে আসেন। তবে চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি সংকটে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয় তাদের। এছাড়াও ময়লা পরিবেশ ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্ভোগেও পড়তে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের।
বর্তমানে এ হাসপাতালে ৩২জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ১৭ জন। প্রায় একলাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত সদর হাসপাতালের জনগণের একমাত্র ভরসা বান্দরবান সদর হাসপাতালটি। এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন, ইসিজি মেশিন, ডেন্টাল চিকিৎসার সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকলেও পর্যাপ্ত ডাক্তারের অভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, দারোয়ান, স্টোরকিপার, ওয়ার্ডবয়সহ লোকবল সংকটে হাসপাতালের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ হাসপাতালটির ১০০ শয্যার মধ্যে পুরুষ ৫০টি, নারী ২৫, শিশু ১৫ এবং ডায়ারিয়া রোগীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১০টি শয্যা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসক আসেন। তবে হাসপাতাল থেকে তারা কোনো ওষুধ পান না। হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে এখানে শতাধিক রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালের বেডগুলোও প্রায় সময় থাকে পরিপূর্ণ। একাধিক রোগী বলেন, প্যারাসিটামল জাতীয় কিছু ওষুধ দেওয়া হলেও প্রায় সব ধরনের ওষুধ দোকান থেকে কিনে আনতে হয়।
বান্দরবান সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা পৌর এলাকার ইসলামপুরের অলি আহমদ জানান, ১০ দিনের বেশি হয়েছে এখানে ভর্তি হয়েছি, সেবা পাচ্ছি, তবে বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনছি। তবে হাসপাতালের পরিবেশ ভালো না। এসব নোংরা পরিবেশ দেখে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
একই কথা বলেন, উপজেলা সুয়ালকের সফিকুল ইসলাম, পৌর এলাকার মেম্বার পাড়ার সামিয়া ইসলাম, শিশু ওয়ার্ডে থাকা শিখা আক্তার। তারা বলেন, আমাদের দীর্ঘ সময় ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আমাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় বাহির থেকেও চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয়না। তাই বাধ্য হয়ে অপেক্ষা করে এখান থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।
বান্দরবান সরকারি কলেজের ছাত্রী সূচনা বড়ুয়া জানান, আলট্রাসনো করতে সদর হাসপাতালে আসি। ডাক্তার একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বাহির থেকে করে আনতে বলে। তিনি আরও বলেন, বাহিরে আলট্রাসনোগ্রাম করতে খরচ বেশি তাই সদর হাসপাতালে এসেছিলাম।
বান্দরবান সদর হাসপাতাল আবাসিক মেডিকেল অফিসার জিয়াউল হায়দার জানান, পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে এসব সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, অচিরেই ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে।
তবে এসব সংকট নিরসনে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন নীহার রঞ্জন দাশ। তিনি বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে আমরা সেবা নিতে আসা রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছি না। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যতটুকু সম্ভব রোগীদের সেবা দিতে।