দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গতকাল মঙ্গলবারে লেনদেন বেড়ে হাজার কোটি টাকার ঘরে কাছাকাছি চলে এসেছে। এদিন বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) গতকাল মঙ্গলবারে লেনদেন কমে ৩০ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। এদিন বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। প্রধান সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে। দুই স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
হঠাৎ করেই চলতি বছরের গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে চলে এসেছিল। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাজার কোটি টাকায় লেনদেন ওঠলেও তা ধরে রাখতে পারেনি। পরের কার্যদিবস থেকে ফের হাজার কোটি টাকার নিচে নেমেছিল। লেনদেন কমে ৬শত কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। সেখানে থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ১০ মার্চ হাজার কোটি টাকা ঘরে চলে এসেছিল। এরপরের দিন লেনদেন ফের হাজার কোটি টাকার নিচে এসেছিল।
সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৫ মার্চ হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন ফিরে। পরের দিনে সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। ফের লেনদেন ৮’শত কোটি টাকার ঘরে অবস্থান ছিল। এরপর সোমবার লেনদেন ৯’শত কোটি টাকার ঘরে এসেছিল। সেখান থেকে লেনদেন বেড়ে মঙ্গলবার হাজার কোটি টাকার ঘরের কাছাকাছিতে অবস্থান করেছে। লেনদেন বাড়া-কমাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে, পুঁজিবাজারে এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেন সহজতর করতে বিনিয়োগকারীদের কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর হওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন জটিলতা সমাধান করার ঘোষণা দিয়েছে। ডিএসই স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার ঘোষণার পরের দিন এসএমই মার্কেটে আটটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বাড়ে। বাকি দুইটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি দর কমেছে এবং অপরিবর্তিত একটির। ডিএসইর ঘোষণা দেওয়ার আগে গত সেমাবার পুঁজিবাজারে এসএমইতে লেনদেন করার যোগ্য হওয়ার জন্য ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রদত্ত অনলাইন ফর্ম পূরণ করে, তা ডিএসইতে মেইল করতে হতো। পরে ডিএসই তা বাছাই করে অনুমোদন দিত। এরপর একজন বিনিয়োগকারী ওই বাজারে লেনদেন করতে পারতো। তবে এখন থেকে বিনিয়োগকারীদেরকে রেজিস্ট্রশন করা লাগবে না।
পোর্টফোলিওতে ২০ লাখ টাকার বিনিয়োগ থাকলেই ডিএসই স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন করে দেবে। ডিএসইর এই ঘোষণার পরে মঙ্গলবার মূল্যসূচক বেড়েছে ১০ শতাংশ। আগের দিনের ৮০৬ পয়েন্টের সূচক মঙ্গলবার ৮৮৭ পয়েন্টে উঠে আসে। দুই স্টকে (ডিএসই ও সিএসই) এদিন (মঙ্গলবার) ৪৬ দশমিক ৫১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসইর ৪৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং সিএসইর ৪৬ দশমিক ১৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর উত্থান হয়। এদিন পুঁজিবাজারে ৪০ দশমিক ৩৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসইর ৩৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং সিএসইর ৪১ দশমিক ২০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর পতন হয়েছে।
এদিন ডিএসইতে সিরামিক, ইঞ্জিনিয়ারিং, নন ব্যাংকিং আর্থিক, বিমা, ফান্ড, টেলিকম এবং বস্ত্র খাতের অধিকাংশ কোম্পিানির শেয়ার দর বেড়েছে। অপরদিকে এদিন চামড়া খাতের শতভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর কমেছে। এছাড়া সিমেন্ট, আইটি, পেপার এবং ওযুধ রসায়ন খাতের অধিকাংশ কোম্পিানির শেয়ার দর কমেছে। এদিন ব্যাংক, জ্বালানি শক্তি, সেবা আবাসন এবং ভ্রমন অবসর খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার উত্থান পতনে মিশ্রাবস্থায় রয়েছে। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর এ ধরনের বাড়া-কমাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা বলে জানায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
ডিএসইতে এদিন লেনদেন হয়েছে ৯৮১ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কার্যদিবস সোমবার ৯২৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। সোমবার লেনদেন হওয়া ৩৮০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১৭৮টির, কমেছে ১৫০টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৫২টির। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৬৫ দশমিক ৩০ পয়েন্টে। ডিএসই-৩০ সূচক ৩ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৭১ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসইএস সূচক দশমিক ৪৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬৪ দশমিক ৯৮ পয়েন্টে।
এদিন ডিএসইতে সোনালি পেপারের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে ডিএসইতে সোনালি পেপার শেয়ার স্থান পেয়েছে। এদিন ডিএসইতে সোনালি পেপার ৭১ কোটি ৫৮ হাজার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে জেনেক্স ইনফোসিস ৬২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, ফরচুন সুজ ৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, বেক্সিমকো ৫৪ কোটি ১০ লাখ টাকা, জিপিএইচ ইস্পাত ২৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ড্রাগন সোয়েটার ২৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংক ২৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ২৩ কোটি ৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স ২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং জিএসপি ফাইন্যান্স ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
সিএসইতে মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর আগের কার্যদিবস সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৭৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০১টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৩৯টির, কমেছে ১২৪টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৩৮টির।
এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৫ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮০৪ দশমিক ৫২ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচক ৮ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ১ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ৮৭৯ দশমিক ৮৬ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২৪৩ দশমিক ৮১ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৩০ সূচক ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং সিএসই-৫০ সূচক ২ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৪ হাজার ২০৩ দশমিক ২১ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪৬১ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে।
এদিন ফরচুন সুজ শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে সিএসইতে কোম্পানিটি শেয়ার স্থান পেয়েছে। এদিন সিএসইতে ফরচুন সুজ ৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এদিন সিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে জিবিবি পাওয়ার ৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, জিপিএইচ ইস্পাত ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ৯৭ লাখ টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৭৬ লাখ টাকা, বেক্সিমকো ৬৬ লাখ টাকা, সাউর্থ ইস্ট ব্যাংক ৫৮ লাখ টাকা, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স ৫৫ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ৫৫ লাখ টাকা এবং ড্রাগন সোয়েটার ৫১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
আনন্দবাজার/টি এস পি