ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জটিলজটে স্বাধীনতাস্মারক নির্মাণকাজ

জটিলজটে স্বাধীনতাস্মারক নির্মাণকাজ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ভাস্কর্য স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণকাজ গত দশ বছরেও শেষ হয়নি। একে একে তিন ভিসি পরিবর্তন হয়েছে। তারপরও ঝুলে আছে নির্মাণকাজ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, সব জটিলতা সমাধান করে দ্রুত স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত এক দশক ধরেই বন্ধ হয়ে আছে নির্মাণকাজ। অনেকেই বলছেন, অর্থাভাবে কাজ বন্ধ হয়েছে। তবে কেউ কেউ বলছেন, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাতেই এমনটা ঘটছে। তা না হলে এবারের স্বাধীনতা দিবসে ভাস্কর্যটি উন্মুক্ত হতে পারতো।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রমতে, বিগত ২০১২ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ভিসি অধ্যাপক ড. মু. আব্দুল জলিল মিয়ার আমলে জনতা ব্যাংকের অনুদানে স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরের বছর ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ভিসি অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী ভাস্কর্যটির মূল ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে কিছু দিন পর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর চতুর্থ ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ পুনরায় এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তবে আগের মতোই হঠাৎ করেই নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম ও বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. হসিবুর রশীদ যোগদান করার এ বিষয়ে এখনও নজর দিতে পারেননি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শফিক আশরাফ বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এখনো স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এটি অনেক আগেই নির্মাণ করার দরকার ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়ে কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনতা স্মারক। এটির গায়ে অযত্নে কালসিটে দাগও পড়েছে। যদি পূর্ণাঙ্গভাবে নির্মাণ করা হতো তাহলে এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বাড়ত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, স্বাধীনতা স্মারক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য। এটি সঠিকভাবে নির্মিত হলে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা ও শিক্ষার ধারণা দিত। এটি চোখে পড়লেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কথা মনে হতো। আমরা সে জায়গা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, নির্মাণ শুরুর দীর্ঘ সময়েও মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য নির্মাণ সম্পন্ন করতে না পারাটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রকাশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী কমলেশ চন্দ্র সরকার বলেন, স্বাধীনতা স্মারক নির্মাণ কাজ শুরুর পর নানান জটিলতায় নির্মাণ কাজ বার বার বন্ধ হয়ে যায়। আমরা আশা করছি সব জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।

নকশা থেকে জানা যায়, ভাস্কর্যটি ১১ হাজার ৬৯৬ বর্গ ফুট আয়তনের বেদীর উপরে তিনটি ফ্রিঞ্জ বা স্তম্ভ দিয়ে তৈরি হবে। এর মধ্যে বড় ফ্রিঞ্জটির উচ্চতা হবে ৫৫ ফুট, দ্বিতীয়টির উচ্চতা ৩৫ এবং তৃতীয়টির উচ্চতা হবে ২৫ ফুট। এগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তাদের বুঝানো হয়েছে। ফ্রিঞ্জগুলোকে একত্রিত করার জন্য ২০ ফুট উচ্চতায় একটি ছাদ হবে। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করেছে তা বুঝানো হয়েছে।

পাথর দিয়ে তৈরি ফ্রিঞ্জগুলোর গায়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংবলিত কারুকার্য থাকবে। ফ্রিঞ্জের ঠিক পেছনে ঢালু অংশে বিভিন্ন মু্র‌্যাল থাকবে। ভাস্কর্যটি সামকগ্রিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিশালতা বুঝাবে। বিশিষ্ট স্থপতি মুনাওয়ার হাবীব তুহিনে নকশায় ‘স্বাধীনতা স্মারক’ নামের এই ভাস্কর্যটি হবে বেরোবির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রথম ভাস্কর্য।

সূত্রমতে, ভাস্কর্যটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ টাকা। জনতা ব্যাংকের অনুদানের ২০ লাখ টাকা দিয়ে কাজ শুরু হলেও অর্থাভাবে এক সময় বন্ধ হয়ে যায় এর নির্মাণকাজ। তবে নতুন করে অর্থসংস্থানের চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। নির্মাণকাজ শেষ হলে চত্বরটি মুক্ত সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন