শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আটকে গেলো বাংলাদেশ-ভারত যাত্রীবাহী রেল চলাচল

আটকে গেলো বাংলাদেশ-ভারত যাত্রীবাহী রেল চলাচল

যাত্রী পরিবহনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকলেও স্বাধীনতা দিবসে চালু করা যাচ্ছেনা বাংলাদেশ- ভারতের মধ্যে চলাচলের অপেক্ষায় থাকা রেল পরিষেবা। ভারতীয় হাইকমিশন ভিসা উন্মুক্ত না করায় এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, আসছে পহেলা বৈশাখে দুই দেশের মধ্যে চলাচল করা ট্রেন চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আর ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছেন, দুইদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমতি দিলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে পর্যটন ভিসা চালু করে দেওয়া হবে।

বুধবার (২৩ মার্চ) দুপুরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। ভারতের অর্থায়নে রেল খাতে চলমান প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেন তারা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, বর্তমানে সব ধরনের ভিসা শুধু বিমান পথে চালু রয়েছে। সড়কপথে যেহেতু বেশি সংখ্যক মানুষের যাতায়াত হয়ে থাকে, সেজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতামতের ওপরে সড়ক ও রেলপথের ভিসা চালু নির্ভর করছে। দুই দেশ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যেই ভিসা চালু করতে পারবো।

এ প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, আমরা রেল চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। কিন্তু ভিসা তো চালু হয়নি, যে কারনে আমরা ভিসা চালুর অপেক্ষা করছি। যেহেতু স্বাধীনতা দিবসে চালু করা যাচ্ছে না সেহেতু আমাদের পরিকল্পনা থাকবে আসছে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে দুই দেশের মধ্যে ট্রেন সার্ভিস চালু করার।

এদিকে কোলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করে জানা গেছে, সেখানেও ভিসা প্রদান শুরু না হওয়ায় রেল সার্ভিস চালু করতে পারছেনা ইন্ডিয়ান রেলওয়ে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলেই সেখান থেকে ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা দেওয়া শুরু করবেন।

আরও পড়ুনঃ  সড়ক দুর্ঘটনায় পিকআপ চালক নিহত

রেলপথ মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমনের কারনে প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশ- ভারতের মধ্যে চলাচল করা ট্রেন মৈত্রী, বন্ধন ও মিতালী। দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচলের জন্য এরই মধ্যে গত ( ২০ মার্চ) রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে বসে আন্ত: মন্ত্রনালয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ভারতে ভ্রমনের ক্ষেত্রে সড়ক ও বিমান পথে যাতায়াতের জন্য ভিসা প্রাপ্তদের রেলপথে ভ্রমনের অনুমতি দেওয়া এবং ভবিষ্যতে ইস্যুকৃত ভিসায় রেলপথ অন্তর্ভূক্ত করে ভিসা ইস্যুর বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনকে চিঠি পাঠাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

আরো সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশ ভারত দুই দেশের কোভিড-১৯ প্রোটোকল পর্যালোচনা পূর্বক ট্রেন পরিচালনায় নিযুক্ত কর্মীদের এবং ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী যাত্রীদের চলাচলের বিষয়ে কর্ম পদ্ধতি নির্ধারনে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতের রেলওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা আনন্দ বাজারকে জানান, আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো স্বাধীনতা দিবসে অর্থাৎ ২৬ মার্চ থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে তিনটি রেল রয়েছে সেগুলো পূনরায় চলাচলের। কিন্তু ভারতীয় হাই কমিশন সড়ক পথে ভিসা প্রক্রিয়া চালু না করায় হয়তো সময় পেছাতে হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেলপথ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে চিঠি পাঠিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশনে।

বাংলাদেশ- ভারতের মধ্যে তিনটি রুটে ট্রেন চলাচল করে। এরমধ্যে ঢাকা- কোলকাতা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা- কোলকাতা রুটে বন্ধন এক্সপ্রেস আগে থেকে চলমান ছিলো। গত বছরের ২৬ মার্চ ঢাকা- নিউ জলপাইগুড়ি রুটে উদ্বোধন করা হয় মিতালী এক্সপ্রেস। যা উদ্বোধনের পর আর চালুর সুযোগ হয়নি।

আরও পড়ুনঃ  পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই পশু জবাই, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

এর আগে ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে যাত্রা শুরু করে ” মৈত্রী এক্সপ্রেস”। ওই যাত্রার উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। দীর্ঘ ৪৩ বছর পর দুই দেশের মধ্যে এ ট্রেন যাত্রার সূচনা হয়েছিলো। আর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর খুলনা-কোলকাতা পথে “বন্ধন এক্সপ্রেস” চলাচলের সূচনা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কোলকাতার মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করেন।

জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমন শুরুর পর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ থেকে এসকল ট্রেন বন্ধ রয়েছে। দুই বছর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় রেলওয়েকে ট্রেন চলাচল পূনরায় চালু করতে চিঠি দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশে ট্রেন চালুর বিষয়ে একমত জানিয়ে গত ১৪ মার্চ বাংলাদেশ রেলওয়ে চিঠি পাঠায় ভারত রেলওয়ে।

সংবাদটি শেয়ার করুন