ঢাকা | বুধবার
১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাড়ছে হৃদরোগ, ক্যান্সার

বায়ুদূষণ

বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ বলে চিহ্নিত করেছে সুইস সংস্থা আইকিউএয়ার। জরিপ করা ৬ হাজার ৪৭৫টি শহরের মধ্যে ৭৬.৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে দেশটি। এর আগেও গত ৭ ও ২০ জানুয়ারিতে ঢাকা দূষণের শীর্ষে চলে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বাতাসের মান বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। এমনকি সবচেয়ে দূষিত ৫০ শহরের মধ্যে ৪৬টিই এই অঞ্চলের। গতবছরের ৬ হাজার ৪৭৫টি শহরের বায়ুতে দূষণের মাত্রা নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

ঢাকার বায়ুদূষণের উৎস নিয়ে গতবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক জরিপে বলা হয়েছে, রাজধানীর বাতাসকে এখন বিষিয়ে তুলছে যানবাহনের ধোঁয়া। বায়ুদূষণের অর্ধেকই (৫০ শতাংশ) মূলত তরল জ্বালানি পোড়ানোর কারণে তৈরি। ১০ শতাংশ ইটভাটায় কয়লা পোড়ানোর ধোঁয়া থেকে ও বাকিটা অন্যান্য ধোঁয়ার মাধ্যমে আসে।

ইন্টারন্যাশনাল ওয়েল বিল্ডিং ইনস্টিটিউট কি-স্টোনের (আইডব্লিউবিআই) ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দূষিত বাতাসের কারণে ঢাকায় ৭২০ জনের প্রাণহানি ও ৭৭৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে, ঢাকা এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স (একিউআই) অ্যান্ড বাংলাদেশ এয়ার পলিউশন ওয়েব সাইটের তথ্যানুযায়ী, গত বছরে বায়ুদূষণে ঢাকায় আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর্থিক ব্যয় হয়েছে ৩২ কোটি মার্কিন ডলার যা টাকার হিসেবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

গত ৫ মার্চ দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণে চীন, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মিয়ানমার ও ভুটানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ। স্টেট অফ গ্লোবাল এয়ার রিপোর্ট এবং ইন্টারেক্টিভ ওয়েবসাইট বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশের বায়ুর গুণমান এবং স্বাস্থ্যের স্তর এবং বহু বছরের প্রবণতাগুলোর একটি বিস্তৃত বিশ্লেষণ করে। এসব সমন্বয় করে বছরে হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই’এস) গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ (জিবিডি) প্রকাশ করা হয়।

তাতে দেখানো হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের আয়ুষ্কাল গড়ে কমছে ২ দশমিক ৯ বছর। চীনে আয়ুষ্কাল গড়ে কমে ১ দশমিক ৮৫ বছর। ভারতে ২ দশমিক ৬৯ বছর। পাকিস্তানে ২ দশমিক ৮৩ বছর। আফগানিস্তানে ২ দশমিক ৬৬ বছর। মিয়ানমারে ২ দশমিক ৬১ বছর। ভুটানে ২ দশমিক শূন্য ৯ বছর। অর্থাৎ বায়ুদূষণে গড় আয়ু কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়াসহ অন্যান্য দেশকেও টপকে গেছে।

এদিকে সুইস সংস্থা আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাতাসের মধ্যে পিএম-২.৫ নামে পরিচিত এক ধরনের পার্টিকল বা সূক্ষ্ম কণার উপস্থিতি হিসাব করা হয়েছে। তাতে জানা যায়, ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে পিএম-২.৫ এর গড় মাত্রা ছিল ৭৬.৯ মাইক্রোগ্রাম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পিএম-২.৫ এর গড় বার্ষিক মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চাঁদ। তাদের পয়েন্ট ৭৫.৯, পাকিস্তানের ৬৬.৮। হু গত বছর তার এয়ার কোয়ালিটি গাইডলাইনস সংশোধন করে জানায় যে, দূষণের ঘনত্ব কম হলেও তা উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। জরিপের ফলাফল অনুসারে, ২০২১ সালে একটি দেশও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড বা বায়ুমান সূচক পূরণ করতে সক্ষম হয়নি।

২০২১ সালে জরিপ করা শহরগুলোর মধ্যে মাত্র ৩.৪ ভাগ এই মান পূরণ করেছে; অন্যদিকে ৯৩টি শহরে প্রস্তাবিত পিএম-২.৫ এর মাত্রা ১০ গুণ বেশি পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির তথ্য জানায়, বিশ্বব্যাপী বায়ু দূষণে প্রাণহানীর ৭০ শতাংশই মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় ঘটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্ট্রোক, হৃদরোগ, শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং সংক্রমণের মতো বায়ু দূষণজনিত রোগে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদের সঙ্গে দৈনিক আনন্দবাজারের পক্ষে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি অ্যান্ড হেড-নেক সার্জারি বিভাগের প্রধান ও অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া, বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ডা. মনি লাল আইচ লিটু দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, এক ধরনের ঘাস ও গাছ আছে তা কালো ধোঁয়াকে শুষে নিয়ে পরিবেশকে স্বাভাবিক রাখে। তা ছাড়া আমাদের বেশি সংখ্যক গাছপালা লাগানো দরকার। কালো ধোঁয়াসহ পরিবেশ দূষণের কারণ হয় এমন কলকারখানা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, দৈনন্দিন জীবনে নিজেকে সতেজ রাখতে হলে গাছপালা লাগানোর বিকল্প নেই। বায়ু দূষণের কারণে অ্যাজমা, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, অ্যালার্জিসহ নানা রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে৷ এমনকি শ্বাসনালীতে ক্যান্সার পর্যন্ত হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন