মেকআপ এখন প্রতিটি নারীর জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা নারীর সৌন্দর্যকে বৃদ্ধির একটি অন্যতম উপায়ও বলা চলে। আর এই মেকআপের মতো কঠিন বিষয়কে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে দেশ ও বিদেশের হাজারো মেক-আপ আর্টিস্ট। একই সাথে মেকআপের মতো জটিল প্রক্রিয়াটিকেও সহজ করতে হাত বাড়িয়েছে তারা। তাছাড়া বর্তমানে পেশা হিসেবেও খুবই জনপ্রিয় ও দারুণ চাহিদার হয়ে উঠেছে মেকআপ আর্টিস্ট। যার ফলশ্রুতিতে প্রতিটি ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে দক্ষতাসম্পন্ন অসংখ্য মেক-আপ আর্টিস্ট।
এসব মেক-আপ আর্টিস্টের মধ্য থেকে একজন তরুণ উদ্যোক্তা ও জনপ্রিয় মেক-আপ আর্টিস্ট ‘সেলিনা মনির’ গল্প শোনাবো। যিনি পৌঁছে গেছে দেশ -বিদেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে। সেলিনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা শেষ করে ফার্মেসিতে ডিগ্রি অর্জন করেন। তার এই ডিগ্রীটিই পরে তাকে কসমেটিক পণ্য সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে সহায়তা করে। শুধু তাই নয়, তিনি চুল ও রূপসজ্জার ওপর লেভেল থ্রি ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাছাড়া তিনি সেলিব্রিটিদের চুল ও মেকআপ আর্টিস্ট হিসাবেও কাজ করেছেন। বিভিন্ন ব্রাইডাল শোতেও তিনি বেশ জনপ্রিয়।
মেকআপের প্রতি তার আবেগ ও ভালোবাসা তাকে নিয়ে গেছে অনন্য মাত্রায়। যার ফলে দেশ-বিদেশের হাজারো সেলিব্রিটিদের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। সেলিনা মনিরের ক্যারিয়ারের অনেক অর্জনের মধ্যে একটি বড় অর্জন হচ্ছে বলিউড অভিনেত্রী জ্যাকলিন ফার্নান্দেজের সঙ্গে কাজ করা। পাশাপাশি তিনি পাকিস্তানি অভিনেত্রী নাদিয়া হুসেন, ফাওজিয়া আমানের সাথেও কাজ করেছেন।
মেকআপের মাধ্যমে তার লক্ষ্য প্রতিটি নারীকে সুন্দর ও আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলা। বাংলাদেশের মেকআপ প্রেমীরা যাতে খুব সহজে মেকআপ শিখতে পারেন এবং নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন সেজন্য এই পেশা বেছে নেন তিনি। এদিকে অনেক মেকআপ আর্টিস্ট তৈরি করতে নানা ধরনের ওয়ার্কশপ করে থাকেন সেলিনা মনির। তার এসব ওয়ার্কশপ সাজানো হয় ৫ দিন ও ৩ দিনের কর্মশালায়। আর তার ওয়ার্কশপের স্পন্সর হিসেবে থাকে নামিদামি সব ব্র্যান্ড। তার মধ্যে অন্যতম রিবানা, আনজারা, উজমাহসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অর্গানিক প্রোডাক্ট ব্র্যান্ড রিবানা’র সাথে কাজ করেছেন তিনি। দেশীয় ব্র্যান্ড রিবানাকে আর্ন্তজাতিক বাজারে পরিচিত করতেও বিশেষ ভূমিকা রাখছেন তিনি।
সেলিনা মনিরের লক্ষ্য শুধু নারীদের মেকআপ শেখানো নয়, তাদের মধ্যকার সুপ্ত উদ্যোক্তাদের বের করে আনাও। তিনি চান প্রতিটি নারীই স্বনির্ভর হয়ে গড়ে উঠক এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করুক। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং মেকআপ চালু করেন। তিনি লন্ডন থেকেও অনলাইনের মাধ্যমে মেকআপ ওয়ার্কশপ পরিচালনা করে থাকেন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মেকআপ শিল্পী সেলিনা মনিরের কাছে হাতেখড়ি নিয়ে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন অসংখ্য নারী। তাছাড়া এদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই তাদের নিজস্ব বিউটি পার্লার খুলেছে এবং কয়েকজন মেকআপ শিল্পী তাদেরকে স্বাধীন ভাবে এই পেশায় নিয়োজিত করেছে।
সেলিনা মনির এখন অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা। মেকআপ শিল্পীরা কীভাবে শিল্প শিখে সফল হতে পারে সে সম্পর্কে বার্তা দেওয়ার জন্য তাকে জাতীয় টিভি চ্যানেলের বিভিন্ন টকশোতে অংশগ্রহন করতেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। তার এসব সফলতা হচ্ছে প্রতিটি স্বপ্নের ফসল।
আনন্দবাজার/এম.আর