কমছে ব্যবহার, অস্তিত্ব সংকটে মৃৎশিল্পিরা
দিন যতই যাচ্ছে ততই বাড়ছে আধুনিকতার ছোঁয়া, চাহিদা বাড়ছে প্লাস্টিকের। দিন দিন ব্যবহার কমছে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের। অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে মৃৎশিল্প। তারপরও পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন অনেকেই। ভালো নেই গাইবান্ধার মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে নিপুণ হাতের কারুকাজের মাধ্যমে মাটি দিয়ে শিল্পিরা তৈরি করে থাকেন নানা ধরনের তৈজসপত্র। তাদের জীবন জীবিকার হাতিয়ার হচ্ছে মাটি। তবে কালের বিবর্তনে তাদের ভালোবাসার জীবিকা বিলুপ্তি পথে। মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারের নজরদারিসহ স্বল্পমূল্যে ঋণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার রোয়ালী, কুমারপাড়া, সাহাপাড়ার এলাকায় মৃৎশিল্পীরা অবসর সময় কাটাচ্ছেন। একসময় মাটির তৈরি তৈজসপত্রের প্রচুর চাহিদা ছিল। তবে এখন মাটির তৈরি তৈজসপত্রের চাহিদা হারিয়ে স্থান দখল করে নিয়েছে এ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য। এসবের দাম বেশি হলেও টেকসই হওয়ায় সবাই ঝুঁকছে সেই দিকেই। প্রতিযোগিতার টিকে থাকতে না পেরে অনেকেই ছেড়ে দিচ্ছে বাপ-দাদার ধরে রাখা এ পেশা। এক সময় গাইবান্ধার ৭ উপজেলায় এ পেশায় সঙ্গে থাকা সকলের দিন কাটতো বেশ সুখে। তবে এখন হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার ছাড়া কারও সেভাবে এ পেশায় ভাত জুটছে না। দিন-রাত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে মাটি দিয়ে তৈরি করছেন বিভিন্ন মৃৎশিল্পের পণ্য। তবে সময় অনুযায়ী তারা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে জানান। ১ টলি মাটির দাম ১ হাজার টাকা। যা দিয়ে ১শ পাতিল তৈরি করা যায়। ১শ’ পাতিল পোড়াতে প্রায় ১ হাজার ২শ’ টাকার খড়ি লাগে। তাই বাজার মূল্যের সঙ্গে টিকে থাকতে না পাড়ায় অনেকেই আর পেশায় কাজ করেত আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কুমাররা মাটি দিয়ে তৈরি করেন, বিভিন্ন রকমের ফুলের টব, পতুল, ল্যাট্রিনের কুয়ারপাত, হাঁড়ি, পাতিলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসিপত্র।
এ বিষয়ে তপন পাল বলেন, বাপ-দাদার কাছ থেকে কাজ শিখেছি। তাই পেশাটা ধরে রেখেছি। আগে আশপাশের এলাকায় মাটির তৈরি জিনিসের ব্যাপক চাহিদা ছিল। তবে এখন চাহিদা কম। আর মাটি থেকে শুরু করে সবজিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিকে বিক্রি কম, আবার লাভও কম হচ্ছে। তিনি আরোও বলেন, এখন আর আগের মতো নেই, দিন পাল্টা যাচ্ছে। মানুষ আর আমাদের জিনিসিপত্র তেমন কেনো না।
সুজন পাল বলেন, বাবা প্রায় ৪ যুগ ধরে এপেশার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে আর টিকে থাকতে পারছেন না। এ পেশার সাঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত থাকায় এখন আর আগে মতো মেলা বসে না। তার জন্য আমাদের এ মাটির খেলনা বিক্রি হচ্ছে না বেশি।
গাইবান্ধার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম বলেন, ‘অন্য সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অনুদানের জন্য তালিকায় মৃৎশিল্পীদের নাম আনা হয়েছে। দুস্থ ও অসহায় পরিবারের মধ্যে বিভিন্ন সময় শুকনো খাবারসহ ত্রাণ বিতরণ করেছি। যদি মৃৎশিল্পীদের মধ্যে কোনো দুস্থ পরিবার আমাদের কাছে আসে, তাহলে সহযোগিতা করব।