শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধীরগতিতে উদ্যোক্তারা অধীর

ধীরগতিতে উদ্যোক্তারা অধীর

বাংলাদেশ এখন আর শুধু কৃষি প্রধান দেশই নয়। শিল্পখাতেও অবস্থান নিশ্চিত হয়েছে। একটু একটু করে পরিকল্পিত শিল্পায়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে দেশ। বর্তমান সরকার দেশের রপ্তানিখাতে প্রবৃদ্ধির লক্ষে চীন, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডের সফলতার ওপর ভিত্তি করে দেশের সম্ভাবনাময় এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর নওগাঁয় অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপন প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দিয়ে প্রস্তাবনায় স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পে বিরাজ করছে ধীরগতি।

বছর দুই পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখা হাজারো বেকার যুবক এবং উদ্যোক্তার মাঝে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এ জেলার বসবাসরত মানুষ।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলার খেড়ুন্দা মৌজায় সাপাহার-খঞ্জনপুর বিওপি ক্যাম্পের রাস্তার উত্তর পাশে জাতীয় সড়ক, নদী, আকাশ পথ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ যাবতীয় অবকাঠামো সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রেখে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর বেজা ২৫৪ দশমিক ১৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠায়। যাচাই-বাছাই শেষে ২৫০ দশমিক ৬৩ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়ে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি জেলা প্রশাসককে চিঠি পাঠায় বেজা। এর ১১ দিন পর ফের ভূমি অধিগ্রহণের সম্ভাব্য ব্যয় জানতে জেলা প্রশাসককে চিঠি পাঠানো হয়।

এর সাড়ে ৪ মাস পর (২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর) ভূমি অধিগ্রহণের সম্ভাব্য ব্যয় হিসেব করে ৭১ কোটি ৮১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে বেজাতে চিঠি পাঠানো হয়। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব পাঠানোর ১৭ মাস অতিক্রম হলেও বেজা থেকে কোনো বরাদ্দ না আসায় এখনো দৃশ্যমান কোনো কাজের অগ্রগতি হয়নি।

আরও পড়ুনঃ  সিলেট ও বগুড়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১১

জেলার ঠাঁ-ঠাঁ বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিত সীমান্তবর্তী এলাকা ২৪৪ দশমিক ৪৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলা ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে আশপাশের উপজেলা পোরশা, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট, মহাদেবপুর এবং পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কয়েকটি উপজেলার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। সেই সঙ্গে হাজারো বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এ উপজেলার প্রধান অর্থকরি ফসল আম, ধান ও গম। পানির সমস্যা থাকায় এক সময় এ অঞ্চলে বছরের একটি মাত্র বৃষ্টিনির্ভর ফসল আমন ধানের ওপর নির্ভর করতে হতো। তবে বর্তমানে ধানের ওপর নির্ভর না করে এ উপজেলার চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে আম চাষে ঝুঁকেছেন।

বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ছাড়িয়ে আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সাপাহার উপজেলা। যার ফলে তরুণ উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ধীরগতি হওয়ায় এখন তারা হতাশ।

সাপাহার বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানা জানান, গত দুই বছরে কৃষিতে অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছি যা বর্তমানে স্থবির হয়ে পরেছে। আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। এতে হাজারো বেকারের কর্মসংস্থান হবে এবং নতুন আরও অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হবে।

অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রসঙ্গে নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ইকবাল শাহারিয়ার রাসেসের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, একটা সময় কৃষি আমাদের অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছে। এখন কৃষির অংশগ্রহণ কমেছে। এর মূল কারণ সেবাখাত ও শিল্পায়নের অবদান। আগামীতে যা আরো বাড়বে। তবে এর জন্য প্রো-ইন্ডাস্ট্রি, প্রো-প্রাইভেট সেক্টর দরকার, যা নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে।

আরও পড়ুনঃ  চায়ের রাজ্যে ঐতিহাসিক দিন

ব্যবসায়ীরা যেন অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো ঘিরে আগ্রহী থাকে তা নিশ্চিত করা জরুরি। তা না হলে আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো থেকে পুরোপুরি সুফল পাব না। আমরা যদি তা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে পরিকল্পিত শিল্পায়নের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, তা আরো সফল হবে। রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য আনা সম্ভব হবে। বাজার বড় হবে। আমাদের অর্থনীতি প্রতিযোগিতা সক্ষম হবে। আমি মনে করি, ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক রূপান্তরে আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।

জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সুমন জিহাদীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণে আনুষঙ্গিক খরচসহ সম্ভাব্য ব্যয়ের একটি চিঠি বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় জেলা প্রশাসকের সার্বিক প্রচেষ্টায় প্রায় শতভাগ প্রস্তুত। শুধু বেজা থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবসহ বরাদ্দ এলেই জেলা ভূমি বরাদ্দ কমিটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করা হবে।

এ বিষয়ে নওগাঁ-১ (সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ) আসনের সংসদ সদস্য খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার আনন্দবাজারকে জানান, ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়েছেন। খুব শিগগিরই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করা হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন