করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমে আসায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর মার্চেই পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা। মৈত্রী, বন্ধন এক্সপ্রেসের পাশাপাশি উদ্বোধন হয়ে থাকা মিতালী এক্সপ্রেসও নতুন করে চালু হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল পূনরায় চালুর জন্য বাংলাদেশ থেকে ভারত সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলো রেলপথ মন্ত্রণালয়। যার জবাব দিয়েছে ভারতীয় রেলওয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতা দিবসে ট্রেনগুলো চালুর চিন্তা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব ড.মোঃ হুমায়ুন কবির।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সুত্র অনুযায়ী, ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে যাত্রা শুরু করে ” মৈত্রী এক্সপ্রেস”। ওই যাত্রার উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। দীর্ঘ ৪৩ বছর পর দুই দেশের মধ্যে এ ট্রেন যাত্রার সূচনা হয়েছিলো ঢাকা- কোলকাতা পথে সপ্তাহে মৈত্রী এক্সপ্রেসের দশ ট্রিপ আসা- যাওয়া করত। সম্পূর্ন শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মৈত্রী ঢাকা থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিন ছেড়ে যায়।শুক্রবার/শনিবার, রবিবার/ সোমবার এবং মঙ্গলবার/ বুধবার ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যেতো। আর কোলকাতা থেকে শুক্র/ শনি, মঙ্গল/ বুধবার ছেড়ে আসে ঢাকার উদ্দেশে।ঢাকা- কোলকাতা এসি কেবিনের ভাড়া প্রতি সিট ভ্রমন কর ৫০০ টাকাসহ ৩৫০৫ টাকা। আর এসি চেয়ার ভ্রমন করসহ ২৫০৫ টাকা। ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড় প্রযোজ্য হবে। তবে তা নির্ধারিত হবে পাসপোর্ট অনুযায়ী।
অন্যদিকে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর খুলনা-কোলকাতা পথে “বন্ধন এক্সপ্রেস” চলাচলের সূচনা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কোলকাতার মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। প্রাথমিকভাবে একদিন করে চালু হলেও পরে বাড়ানো হয় উভয় ট্রেনের ট্রিপ। এটি প্রথম দিকে বাংলাদেশের খুলনা থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার ছেড়ে যেতো এবং দুপুরে কোলকাতা যাত্রা শুরু করে বন্ধন। এরপর পেট্রাপোল, যশোরের বেনাপোল হয়ে যশোর হয়ে খুলনা পৌঁছায়। এছাড়া এই ট্রেনে এক্সিকিউটিভ চেয়ার ও এসি চেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে। খুলনা-কোলকাতার এক্সিকিউটিভ চেয়ারের ভাড়া ভ্রমন কর সহ ২৫০৫ টাকা। এসি চেয়ার ভ্রমন করসহ ১৫০৫ টাকা।
আর ঢাকা- নিউ জলপাইগুড়ি পথে চলাচল শুরু করে মিতালী এক্সপ্রেস।এটিও দুই দেশের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবেই ২০২১ সালের ২৭ মার্চ এই ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়। এটি ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে গিয়ে ভারতের শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়িতে গিয়ে থামার কথা। এটি তৃতীয় ট্রেন যা বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাতায়াত করে। করোনাভাইরাসের সংক্রমন শুরু হওয়ার পর থেকে এসকল পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এটিও স্বাধীনতা দিবসে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয় সুত্র। মিতালি চালু হলে সপ্তাহে দুই দিন চলবে রবিবার ও বুধবার নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছেড়ে আসবে ঢাকাতে আর ঢাকা থেকে সোমবার ও বৃহস্পতিবার ছেড়ে যাবে নিউ জলপাইগুড়িতে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে মহামারি করোনাভাইরাসের হানা শুরু হওয়ার সময়েই মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস ২০২০ সালে ১৫ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর করোনার সংক্রমন মাথায় নিয়ে উদ্বোধন হওয়া মিতালী যাত্রাই শুরু করতে পারেনি। সব মিলিয়ে টানা দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচল। করোনা সংক্রমন কমে আসার পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় রেলওয়েকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেখানে বাংলাদেশ রেল চলাচলের জন্য প্রস্তুত বলে জানানো6 হয়। ওই চিঠির জবাব গত ১৪ মার্চ পাঠায় ইন্ডিয়ান রেলওয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রেলগুলো পূনরায় চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিমান চলাচল শুরুর পর থেকেই ট্রেন চালু করে দেওয়ার দাবি উঠেছিলো। কারন বাংলাদেশের অনেক মানুষ চিকিৎসা, ভ্রমন, ব্যবসাসহ নানা কাজে ভারতে যাতায়াত করে থাকেন। নিরাপদে যাতায়াতে অনেকেই রেলপথ বেছে নেন। দুই দেশের মধ্যে এই ট্রেন সার্ভিস চালু হলে দুই বাংলার মানুষ উপকৃত হবেন।
আনন্দবাজার/শহক