বিদেশ থেকে আয় করে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পঠান প্রবাসীরা যার অধিকাংশই জমা থাকে আমানত হিসেবে। তবে বিগত সময়ের তুলনায় ব্যাংকে প্রবাসীদের আমানত কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। করোনার ধাক্কা সামাল দিতে আমানতের একটা অংশ তুলে নিয়েছে প্রবাসীদের পরিবার। করোনার ধাক্কায় পড়ে এখন সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে তারা।
ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের একটি বড় অংশ তুলে ফেলছে স্বজনেরা। ব্যাংক হিসাবে যে অর্থ আসে, তা উত্তোলনের পর বাকিটা জমা থাকে। ফলে ব্যাংকে প্রবাসীদের জমানো টাকা বৃদ্ধির হার কম। আর প্রবাসীদের পাঠানো আয়ও কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১ সালের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকে প্রবাসীদের আমানত প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ সময় ব্যাংক খাতে প্রবাসীদের আমানত কমেছে ২ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে প্রবাসীদের আমানত ছিল ৪ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ২১২ কোটি টাকা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, করোনার কারণে অনেক প্রবাসীর আয় কমেছে। সেই ধাক্কা এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। আর এখন প্রবাসীদের সঞ্চয় করার মতো অবস্থা নেই। অনেকের পরিবার এখন আগের জমানো টাকা ভেঙে খাচ্ছে। তাদের সঞ্চয়ে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে প্রবাসীদের বন্ডে বিনিয়োগ আরও সহজ বা তাঁদের সঞ্চয়ে বেশি সুদ দিলে তারা আরও উৎসাহিত হবেন।
সম্প্রতি ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছিল ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আমানত বেড়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। ব্যাংকাররা বলছেন, সম্প্রতি ব্যাংকগুলো টাকা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রচুর ডলার কিনেছে। এ কারণে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।
এদিকে প্রবাসীদের পাশাপাশি ব্যাংক খাতে বিশেষ স্কিমের আমানতেও জমানো টাকা কমে গেছে। বিশেষ স্কিমের মধ্যে আছে শিক্ষা সঞ্চয়, হজ স্কিম, মোহরানা স্কিম, স্বাস্থ্য সঞ্চয়সহ বিশেষ উদ্দেশ্যে জমানো টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিশেষ সঞ্চয় স্কিমে আমানত ছিল ৩৪ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে যা কমে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। খাত–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে নতুন করে বিশেষ উদ্দেশ্যে সঞ্চয় কমে গেছে। আবার অনেকে নিয়মিত কিস্তি জমা দিতে না পেরে বিশেষ সঞ্চয় স্কিম ভেঙে ফেলছেন। ফলে বিশেষ স্কিমে জমানো টাকা কমে গেছে।
করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ে প্রবাসীরা বিদেশ থেকে প্রতি মাসে ১৪০ থেকে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার পাঠাতেন। কিন্তু করোনা শুরু হওয়ার পর প্রবাসী আয়ের পরিমাণ অনেকটা বৃদ্ধি পায়। এক মাসে প্রবাসী আয় বেড়ে প্রায় ২৬০ কোটি ডলারে উঠে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং বৈশ্বিক যোগাযোগ গতি পায়, তখন থেকে কমতে শুরু করে। এর ফলে ২০২১ সালে প্রবাসী আয় কিছুটা বেড়ে ২ হাজার ২০৭ কোটি ডলার হয়। ২০২০ সালে যা ছিল ২ হাজার ১৭৪ কোটি ডলার। বছরভিত্তিক হিসাবে আয় বাড়লেও অর্থবছর হিসাবে আয় কমে প্রায় ২১ শতাংশ।