দখল-দূষণে হারিয়ে যেতে বসেছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় এক কিমি. দৈর্ঘ্যরে দলিয়া লেক। পৌরসভার চৌধুরীপাড়া এলাকায় অবস্থিত লেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলা আর দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। লেকটির দু’পাড়ে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধ স্থাপনা আর ময়লা-আবর্জনার স্তুপ ফেলে দখল করছে। পাশাপাশি মাটিরাঙ্গা বাজারের সকল ময়লা-আবর্জনা এ লেকে ফেলা হচ্ছে।
সরেজমিনে মাটিরাঙ্গাবাজার ও চৌধুরীপাড়া দেখা যায়, দলিয়া খালের শাখায় দোকান বাড়ি ও রেস্টুরেন্টের আবর্জনা ফেলার কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। চারপাশে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে অনেক প্রভাবশালী। আবার অনেকে নতুন করে বাড়ি নির্মাণ করছে। লেকের পানি ঘেঁষে পিলার দাঁড়িয়ে আছে। লেকের পানির কালো রং ধারণ করেছে। পানিতে আবর্জনার কারণে মশা উৎপাদন কেন্দ্রের পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে মানুষ হেঁটে চলাচল করতে পারছে না।
মাটিরাঙ্গা বাজারের বাসিন্দা হাসান ইমাম জানান, এটি এক সময় দলিয়া খালের শাখা ছিল। এখন আর নেই। খালের শাখাটিতে মাটিরাঙ্গাবাজার ও চৌধুরীপাড়ার মানুষরা আবর্জনা ফেলার কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া লেক ঘেঁষে মার্কেট, বিভিন্ন দোকান ও বাড়ি নির্মাণ দখল চলছে।
স্থানীয়রা জানান, লেকের পাশে বাজারের ও পাড়ার ঘর-বাড়ির দোকানের সকল আবর্জনা লেকে এসে জমা হয়। এতে লেক ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এক সময় এ লেকটি মাছ উৎপাদনের উর্বরক্ষেত্র ছিল।
মাটিরাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি জসিম উদদীন ভূঁইয়া জানান, লেকের রক্ষণাবেক্ষণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, দেখার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের কাছে থাকলেও আজ পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। লেকটিকে নতুন রূপে ফিরিয়ে আনতে পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ জরুরী।
স্থানীয় হাসানুল হক বাছরি বলেন, লেকটি জলধারার প্রধান উৎস ছিল। ময়লা-আবর্জনা ফেলার পাশাপাশি প্রভাবশালীরা দিন দিন লেকটি দখল করে নিচ্ছে। বাজার অথবা বাসাবাড়িতে আগুন নেভাতে পানি পাওয়া যায়। প্রশাসন ও পৌরসভা লেকটি সংরক্ষণ করে প্রকল্পের আওতায় এনে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিল কোকন খোকন বলেন, লেকের পাড়ে যে যার যার জায়গায় বাড়ি করছে বলে দাবি করছে। লেকের সীমানা নির্ধারণ হলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়ে যেতে। আর ভবিষ্যতে কেউ অভৈধ সুযোগ পেতো না।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র শামসুল হক বলেন, প্রাচীন এ লেকটি দখল করে অনেকেই মধ্যখানে চলে গেছে। প্রশাসন যদি সরকারিভাবে লেকটি উদ্ধার করে তাহলে প্রকল্পের আওতায় এনে লেকটিকে পর্যটনে কেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৃলা দেব জানান, প্রশাসন এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। লেকটি উদ্ধারে প্রতিমাসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত আছে। নির্দিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে