- গোশতের দাম নিয়ে হাতাহাতি
- বাজার মনিটরিংয়ের দাবি স্থানীয়দের
নীলফামারীর সৈয়দপুরে হঠাৎ করেই গরুর গোশতের দাম কেজিতে একশ’ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি গোশত। অথচ আগে ছিল ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকা। পৌরসভা বা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই গোশত ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত এ দাম বাড়িয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এভাবে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এনিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। বাজার মনিটারিংয়ে প্রশাসনের কোনো তদারকি না থাকায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন ভোক্তা ও সচেতন মহল। তারা এখনই হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
গোশত বিক্রেতারা বলছে, গরুর দাম বেশি। আর খামারীরা বলছে গো-খাদ্যের দাম বেশি। এ কারণে বাজার লাগামহীন হয়ে পড়েছে। বাজারে গোশতের চাহিদা থাকলেও সে অনুযায়ী গরুর সরবরাহ না থাকায় দাম বেড়েছে। বিশেষ করে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলায় গরু মোটা-তাজাকরণ খামার রয়েছে ২৭৮টি। এরমধ্যে নিবন্ধিত খামার ৭৪টি। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় কুলাতে না পেরে অনেকে খামারে গরু কমিয়ে দিয়েছেন। কেউবা রোলিং ব্যবসা করছেন। একহাটে গরু কিনে তারা আরেক হাটে বিক্রি চালু করেছেন।
এদিকে উপজেলায় প্রতিদিন গোশতের চাহিদা ১২ থেকে ১৫ টন। এজন্য পৌরসভার নয়াবাজার কিলখানাসহ গোলাহাটে এবং উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ৮০ থেকে ১০০টি গরু জবাই করা হয়। এসব সৈয়দপুরের ঢেলাপীর হাট ও বিভিন্ন খামারের পাশাপাশি নীলফামারী, ডেমার, জলঢাকা, রংপুরের তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, দিনাজপুরের পাকেরহাট, আমবাড়িহাট, রানীরবন্দর ও ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকেল হাট থেকে সংগ্রহ করা হয়।
সৈয়দপুর পৌরসভার কসাই সমিতির সভাপতি নাদিম আকতার ছটু বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ আছে। খামারগুলোতেও আগের মত গরু পালন করা হচ্ছেনা। ফলে স্থানীয় হাটগুলোতেও দেশীয় গরু চাহিদামত পাওয়া যাচ্ছেনা। যাও পাওয়া যায় তার দাম অনেক বেশী। আর দূরের গ্রামাঞ্চলের হাটে গরুর দাম কিছুটা কম থাকলেও এখন তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে পরিবহণ খরচ বাড়ায় সেখান থেকে কিনে এনেও পরতা হচ্ছেনা। ফলে আমরা বেশী দামে গোশত বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। না হলে লাভ করাতো দূরের কথা ব্যবসাও টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবেনা। তাই এক্ষেত্রে প্রশাসনেরও করার কিছু নেই।
উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের পশু খামারী আনিস জানান, যেখানে গো খাদ্যের দাম বস্তাপ্রতি ৭ থেকে ৮শ’ টাকা ছিল। সেই বস্তা এখন ১ হাজার ৪ শ’ থেকে ৭ শ’ টাকা। দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। সেইসাথে ঘাস ও অন্যান্য সামগ্রীর দামও বেড়েছে।
তিনি বলেন, একটা ছোট গরু হাট থেকে কিনে এনে মোটা তাজা করনের মাধ্যমে বিক্রির উপযুক্ত করতে নূন্যতম ৬ মাস থেকে একবছর সময় লাগে। এ সময়ে লালন-পালনে প্রচুর খরচ হয়। খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের সিংহভাগই চলে যায় এ খরচে। যে কারণে গরুর দামও বেড়ে গেছে।
বেশী দামে বিক্রি করলে ক্রেতা পাওয়া যায়না আবার কম দামে বিক্রি করলে লাভও কম হয়। একারণে অনেকে পশুপালন ছেড়ে দিয়েছে। এতে বাণিজ্যিকভাবে খামারের মাধ্যমে গোশতের চাহিদা মেটানোর মত পশু উৎপাদনের সংখ্যা কমে গেছে। ফলে বাজারে প্রয়োজনীয় পশু সরবরাহ নেই।
শুক্রবার সকালে সৈয়দপুর পৌরবাজারে গোশত কিনতে আসা শহরের বাঁশবাড়ী মহল্লার শাহজালাল জানান, গো-খাদ্যের দাম বেশি বা উৎপাদন কম অথবা পরিবহন খরচ বৃদ্ধি যতই অজুহাত দেন না কেন। কষ্ট তো পাচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা। এভাবে যদি চলতে থাকে, তবে আগামী রমজানে মনে হয় গরুর গোশত ৭ থেকে ৮শ’ টাকা কেজি দরে কিনতে হবে। শুধু কি তাই তেল, চিনি, চাল, ডালসহ সব নিত্যপণ্যের বাজারই উর্ধগতির। শাক-সবজি, দুধ-ডিম-মাছেরও একই অবস্থা। তিনি ক্রেতাদের নাভিশ্বাস অবস্থা থেকে রেহাই দিতে বাজার মনিটরিংয়ে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ দাবী করেন।