ঢাকা | রবিবার
১০ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কদর বেড়েছে ভালো কোম্পানির

পুঁজিবাজার

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মন্দায় কেটেছে। এর মধ্যেও ডিএসইর লেনদেনে ভালো কোম্পানির শেয়ারের প্রতি কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ‘এ’ ক্যাটাগরির ৮০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানি ১ হাজার ৯০৯ কোটি ৪৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা বা ৩২ শতাংশ শেয়ার কেনাবেচা করেছে। যেখানে সপ্তাহটিতে মোট ৩৯২টি কোম্পানি লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৯৬৭ কোটি ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৮৪৫ টাকার শেয়ার।

গেল সপ্তাহে অর্থের পরিমাণে লেনদেন সেরা অবস্থানে ‘এ’ ক্যাটাগরির ফরচুন সুজের শেয়ার। দ্বিতীয় অবস্থানে ওঠে এসেছে ‘এ’ ক্যাটাগরির বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির (বেক্সিমকো) শেয়ার। তৃতীয় অবস্থানে ওঠে এসেছে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার। সপ্তাহটিতে এই তিন কোম্পানি ১ হাজার ১৫৫ কোটি ৫৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা শেয়ার কেনাবেচা হয়।

ডিএসইর সূত্রমতে, ‘গত সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৬ দশমিক ৭০ পয়েন্টে, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও কমেছে দশমিক ১৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১২ শতাংশ।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিই ধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৭০ পয়েন্টে। মানে পিই হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহটিতে ফরচুন সুজ একাই ৫০১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বা ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ শেয়ার কেনাবেচা হয়। গত বৃহস্পতিবার শেয়ার প্রতি দর দাঁড়িয়েছে ১৩৪ দশমিক ৫০ টাকা। আগের সপ্তাহে বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) শেয়ার প্রতি দর ছিল ১২১ দশমিক ৩০ টাকা। সপ্তাহটিতে কোম্পানির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১৩ দশমিক ২০ টাকা বা ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৭০ হাজার ৩২টি শেয়ার লেনদেন হয়। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বেক্সিমকো একাই ৪০৭ কোটি ৫৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকার বা ৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ শেয়ার কেনাবেচা হয়।

গত বৃহস্পতিবার শেয়ার প্রতি দর দাঁড়িয়েছে ১৫০ দশমিক ৯০ টাকা। আগের সপ্তাহে বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) শেয়ার প্রতি দর ছিল ১৪৭ দশমিক ২০ টাকা। সপ্তাহটিতে কোম্পানির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৭০ টাকা বা ২ দশমিক ৫১ শতাংশ। তৃত্বীয়তে থাকা ওরিয়ন ফার্মা একাই ২৪৬ কোটি ২৯ লাখ ৫১ হাজার টাকার বা ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ার কেনাবেচা হয়। গত বৃহস্পতিবার শেয়ার প্রতি দর দাঁড়িয়েছে ১১১ দশমিক ১০ টাকা। আগের সপ্তাহে বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) শেয়ার প্রতি দর ছিল ১১৩ দশমিক ৩০ টাকা। সপ্তাহটিতে কোম্পানির শেয়ার প্রতি দর কমেছে ২ দশমিক ২০ টাকা বা ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

লেনদেন শীর্ষে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (এ ক্যাটাগরি) ২২৫ কোটি ৮৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা, সাইফ পাওয়ারটেক (এ ক্যাটাগরি) ১১০ কোটি ৪৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, রহিমা ফুড (বি ক্যাটাগরি) ৮৯ কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, ইয়াকিন পলিমার (বি ক্যাটাগরি) ৮৪ কোটি ৩৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা, সোনালী পেপার (এ ক্যাটাগরি) ৮১ কোটি ৮৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স (এ ক্যাটাগরি) ৮০ কোটি ৮৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং আনোয়ার গ্যালভানাইজিং (এ ক্যাটাগরি) ৮০ কোটি ৮৩ লাখ ৩ হাজার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো বিধায় নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া ‘এন’ ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো ‘এন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।

ডিএসইর সূত্রমতে, গেল সপ্তাহে টপটেন গেইনার তালিকায় ৮০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারের অবস্থান করেছে। টপটেন লুজারে অবস্থান করেছে ৭০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারের দাপট ছিল। অপরদিক, গেইনারে ২০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি শেয়ার অবস্থান করেছে। লুজারে ১০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি এবং ২০ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ারের অবস্থান করেছে। এই ধরনের লেনদেন চিত্রকে সবাই স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হচ্ছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টারা। তারা বলছে, ‘এ’ ক্যাটাগরির বা ভাল কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বেশি হওয়া ভাল লক্ষন। এটা পুঁজিবাজার ইতিবাচক গতি আরো বৃদ্ধি করবে।

গেল সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৭টির বা ২২ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির এপেক্স ফুডসের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি ছিল। সপ্তাহটিতে লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এ বৃদ্ধির মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন গেইনারে শীর্ষে উঠে আসে। অপরদিকে লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৮০টির বা ৭১ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। সপ্তাহটিতে ‘এন’ ক্যাটাগরির ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে কম ছিল। লেনদেন মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ১৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এই কমার মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন লুজারের শীর্ষে উঠে আসে।

গেল সপ্তাহে টপটেন গেইনারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্টাইল ক্রাফট (এ ক্যাটাগরি) ১৭ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল (এ ক্যাটাগরি) ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, বাংলাদেশ ল্যাম্পস (এন ক্যাটাগরি) ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ, শমরিতা হাসপাতাল (এ ক্যাটাগরি) ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, আরামিট সিমেন্ট (বি ক্যাটাগরি) ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ, এপেক্স ট্যানারি (এ ক্যাটাগরি) ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ, রহিম টেক্সটাইল (এ ক্যাটাগরি) ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ, এমবি ফার্মা (এ ক্যাটাগরি) ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং বিডি অটোকারস (বি ক্যাটাগরি) ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে।

ওই সপ্তাহে টপটেন লুজারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স (এ ক্যাটাগরি) ১৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স (এ ক্যাটাগরি) ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, দি পেনিনসূলা (এ ক্যাটাগরি) ১১ দশমিক ২১ শতাংশ, প্রাইম ইসলামী (এ ক্যাটাগরি) ১০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, বে-লিজিং (এ ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স (এন ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, কুইন সাউর্থ টেক্সটাইল (এ ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস (বি ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স (এ ক্যাটাগরি) ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ করে শেয়ার দর কমেছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন