মৌলভীবাজারে এ বছর কমলার আশানুরুপ ভালো ফলন হয়েছে। উপযুক্ত আবহাওয়া ও পরিচর্যার ভালো হওয়ায় হেক্টরপ্রতি ১ টন পর্যন্ত উৎপাদন বেড়েছে। আগের বছরের তুলনায় চাষের পরিমাণ ১৯০ একর বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু পোকার আক্রমণে কমলাগুলো পাকার আগেই ঝরে পড়ছে। আবার অন্যদিকে ফলের আকার অনুযায়ী আশানুরুপ দাম না পাওয়ায় হতাশ চাষীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, নাগপুরী, দার্জিলিং ও খাসি জাতের কমলা চাষ হয়। এর মধ্যে বেশি চাষ হয় খাসি জাতের কমলা। এ বছর জেলার ৪৪০ একর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। এরমধ্যে বড়লেখায় ১৫০, জুড়িতে ২৩০ একর এবং কুলাউড়ায় ১২০ একর। অন্যান্য উপজেলায় বাকি ১০ একর জমিতে চাষ হয়েছে।
গত বছর একই এলাকায় চাষ হয়েছিল ২৫০ একর জমিতে। সে তুলনায় এবার বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯০ একর। ছোট-বড় ১৪৬টি বাগানে এবার হেক্টরপ্রতি সাড়ে ৫ টন উৎপাদন হয়েছে। গত বছরে যা ছিল সাড়ে ৪ টন। সে হিসেবে এবার প্রতি হেক্টরে ১ টন করে উৎপাদন বেড়েছে। জেলায় সব মিলিয়ে ৫ শতাধিক কমলা চাষি রয়েছে।
কমলা চাষি ফকরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন গাছ থেকে কমলা ঝরে পড়ছে। গান্ধি পোকা কমলার উপর দিয়ে হেঁটে গেলে কমলা ঝরে পড়ে। পোকা কমলার মধ্যে সুঁইয়ের মতো হুল ঢুকিয়ে দেয়। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা বিভিন্ন ফাঁদ ব্যবহার করলেও কাজে আসছে না।
কমলা চাষি আব্দুল গনি মিয়া বলেন, তার বাগানে প্রায় ১২শ কমলা গাছ রয়েছে। ফল পাকা শুরু হতেই এক ধরনের পোকা কমলার রস খেয়ে নেয়। এতে পচন ধরে। তাই তারা আধাপাকা কমলা বিক্রি করে দিচ্ছেন। স্থানীয় পাইকারের কাছে ১০০ কমলা ২০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।
চাষিরা বলেন, একটি গাছে ৫০ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত কমলা ফলে। কিন্তু ৪০ ভাগ কমলাই ঝরে পড়ছে। ফলে তারা আগাম বিক্রি করে ফেলছেন। আবার অভাবের তাড়নায় অনেক চাষি অগ্রিম বিক্রি করে দেন। এরজন্য সঠিক দাম পান না তারা। এজন্য সরকারিভাবে সেচ মেশিন, সার ও পোকা দমনে সহায়তার দাবি জানান তারা। আগে কমলা চাষের একটি প্রকল্প ছিল। ২০০৮ সাল থেকে প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে। প্রকল্পটি চালুর দাবি জানান চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, বর্ষার পরপর গাছের ডাল ছাঁটাই এবং খরার সময় সেচ দেওয়া দরকার। বিশেষ করে পৌষ থেকে ফাল্গুন মাসে সেচ দিলে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়। অন্যদিকে কমলা গাছে কীটনাশক ব্যবহার করলে পোকা দমন সম্ভব। লেবু জাতীয় ফলে ছত্রাকনাশক ১৫ দিন পরপর ৩ বার স্প্রে করলে এ জাতীয় রোগ দমন করা যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক লুৎফুল বারি জানান, কয়েক বছর ধরে কমলার রোগ ও পোকা-মাকড় দমনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন তারা। সুষম উৎপাদন পদ্ধতি চাষিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা তা পালন করেছেন; তাদের ফলন ভালো হয়েছে। গাছে যে পরিমাণ কমলা আসে; সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় গাছ তা ধরে রাখতে পারে না।
আনন্দবাজার/ইউএসএস