- লেনদেন সেরা ডিএসইতে বেক্সিমকো, সিএসইতে রবি
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সব ধরনের সূচক উত্থান হয়েছে। এদিন দুই স্টকের লেনদেন বেড়েছে। একই দিনে ডিএসইর লেনদেন ১২শ কোটি টাকার কাছাকাছিতে অবস্থান করেছে। ডিএসইতে বেশির ভাগ কোম্পানি শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। তবে সিএসইতে বেশির ভাগ কোম্পানি শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে।
এদিকে, চলতি সপ্তাহের রবিবারে পুঁজিবাজার বড় উত্থান হয়। ওইদিন বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতা বহুগুনে বেড়েছিল। রবিবারের মতো গত সোমবারেও উত্থান অব্যাহত ছিল। ওইদিনে ক্রেতার চাপ বেশি ছিল। গত মঙ্গলবারেও উত্থান অব্যাহত ছিল। ওইদিনে ক্রেতা বহুগুনে বাড়তি ছিল। সেই উত্থানের ধারা গতকাল বুধবারেও অব্যাহত আছে। বিভিন্ন মহলের শত চেষ্টায় পুঁজিবাজারে এ ধরনের উত্থান বলে জানান মতিঝিলের বিভিন্ন সিকিউরিটিজ হাউজ কর্মকর্তারা।
তারা বলেন, গেল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বা গত বৃহস্পতিবার ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের পর থেকেই পুঁজিবাজার উত্থান। এ নিয়ে টানা চার কার্যদিবস পুঁজিবাজারে সূচকসহ লেনদেন বেড়েছে। এর সঙ্গে নতুন যোগ হলো গত মঙ্গলবারের পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হবে ক্রয়মূল্যে এ সিদ্ধান্ত। সব মিলিয়ে উত্থানে ফিরেছে পুঁজিবাজার।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গত দুই কার্যদিবস (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) বড় পতনের পরদিন চার কার্যদিবস ধরে (রবিবার, সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার) উত্থানে রয়েছে পুঁজিবাজার। এদিন (বুধবার) ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৯৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার। এ ধরনের লেনদেন ৫৭ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ হিসেবে গণ্য হয়। এর আগে ১০ মে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১৫২টি বা ৩৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ, কমেছে ১৬২টি বা ৪২ দশমিক ৪১ এবং পরিবর্তন হয়নি ৬৮টির। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩০০ দশমিক ১০ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ২৪ দশমিক ৬১ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৮ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ২৫৮ দশমিক ৮২ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ৩৭০ দশমিক ৫১ পয়েন্টে।
এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন বেক্সিমকো ৯৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফরচুন সুজ ৫৫ কোটি ৮ লাখ টাকা, আইপিডিসি ৩৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, মালেক স্পিনিং ৩২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৩১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, সোনালি পেপার ৩০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং ২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশন ১৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, শাইনপুকুর সিরামিকস ১৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ১৮ কোটি ১৫ লাখ টাকার কেনাবেচা হয়েছে।
অপরদিক সিএসইতে গতকাল বুধবার লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০৫টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৫০টি বা ৪৯ দশমিক ১৮ শতাংশ, কমেছে ৯৮টি বা ৩২ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং পরিবর্তন হয়নি ৫৭টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৬৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৮৩ দশমিক ১৫ পয়েন্টে।
এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ১৪ দশমিক ৪১ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৯৯ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৯৮ দশমিক ৩০ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ৭ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩৫৬ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৪৪১ দশমিক ৮০ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৭৩ দশমিক ৭০ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ১৬২ দশমিক ৯১ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে রবির শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন রবি ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ৭৩ লাখ টাকা, জিএসপি ফাইন্যান্স ৫৭ লাখ টাকা, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকো ৫১ লাখ টাকা, ফরচুন সুজ ৫০ লাখ টাকা, আইএফআইসি ব্যাংক ৫০ লাখ টাকা, জেএমআই হসপিটাল ৪৮ লাখ টাকা, লঙ্কাবাংলা ৪৪ লাখ টাকা এবং ফাস্ট ফাইন্যান্স ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিভিন্ন সমস্যায় ঈদের (ঈদুল আযহা) পর থেকেই পুঁজিবাজার নিম্নমুখী ছিল। ঈদের পরে টানা ৯ কার্যদিবস ধরে পুঁজিবাজার পতন। সেই পতন হঠাৎ করেই দুই কার্যদিবস সামান্য উত্থানে ফিরেছিল। সেই উত্থান ধরে রাখা যায়নি। ফের নেমে আসলো পুঁজিবাজারে পতন। দীর্ঘ পতন পর হঠাৎ উত্থানে আসায় কিছু শান্তি পেয়েছিল বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বিদায়ী সপ্তাহে শেষ দুই কার্যদিবসে (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) বড় ধরনের পতনে তাদের সেই শান্তিতে বড় ধরনের ছেদ পড়েছিল। এ ধরনের পতন বিষয়টি চরমভাবে ভাবিয়ে তুলেছিল বিএসইসিকে।
ফলে গত বৃহস্পতিবারে পতন থেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বাঁচাতে শেয়ার দর পতনের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ঠিক তার পরেরদিন গত রবিবার বড় উত্থান হয়েছিল পুঁজিবাজারে। সেই উত্থান ধারা সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবারও অব্যাহত আছে। ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ পরের চার কার্যদিবস এ ধরনের উত্থানকে স্বাগত জানালেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
মতিঝিলের সিকিউরিটিজ হাউজের কর্মকর্তারা বলেন, দীর্ঘসময় ধরে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা শেয়ারের বাজারমূল্য, নাকি ক্রয়মূল্যে গণনা হবে সেটি নিয়ে বির্তক চলছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক চেয়েছিল বাজারমূল্যে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা হিসাব থাকুক। তবে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চাচ্ছিল ক্রয়মূল্যে এই বিনিয়োগসীমা হিসাব করা হোক। দীর্ঘ বিতর্কের পর নির্ধারণ হলো পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হবে ক্রয়মূল্যে।
মন্তব্য করুন