- চার খাতের শতভাগ কোম্পানির দর উত্থান
- লেনদেন সেরা বেক্সিমকো
- ৭০ কোম্পানি শেয়ার দর উত্থান
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সব ধরনের সূচক উত্থান হয়েছে। এদিন দুই স্টকের ৭০ কোম্পানি শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। এদিন ডিএসইর লেনদেন বাড়লেও সিএসইর কমেছে। এদিন ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
এদিকে, চলতি সপ্তাহের রবিবারে পুঁজিবাজার বড় উত্থান হয়। ওইদিন বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতা বহুগুনে বেড়েছিল। রবিবারের মতো গত সোমবারেও উত্থান অব্যাহত ছিল। ওইদিনেও বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতা চাপ বেশি ছিল। সেই উত্থান ধারা গতকাল মঙ্গলবারেও অব্যাহত আছে। এদিনও বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতা বহুগুনে বাড়তি। এদিন শেয়ার ক্রেতার চাপে হিড়িক। বিভিন্ন মহলের শত চেষ্টায় পুঁজিবাজারে এ ধরনের উত্থান বলে জানান মতিঝিলের বিভিন্ন সিকিউরিটিজ হাউজ।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার ডিএসইর সব খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ে। এর মধ্যে তিন খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়। শতভাগ উত্থানে ওঠা খাতগুলো হলো- পাট, পেপার এবং সেবা আবাসন। এদিন জ্বালানি শক্তি ৯১ শতাংশ, আইটি ৯১ শতাংশ, বিমা ৮৯ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং ৮৮ শতাংশ, ব্যাংক ৮৫ শতাংশ, চামড়া ৮৩ শতাংশ, ওষুধ রসায়ন ৮১ শতাংশ, সিরামিক ৮০ শতাংশ, বিবিধ ৮০ শতাংশ, ভ্রমন অবসর ৭৫ শতাংশ, আইটি ৭৩ শতাংশ, সিমেন্ট ৭১ শতাংশ, নন ব্যাংকি আর্থিক ৭০ শতাংশ, টেলিকম ৬৭ শতাংশ, বস্ত্র ৬৪ শতাংশ এবং খাদ্য আনুষঙ্গিক খাতের ৬২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এদিন ফান্ড খাতের শেয়ার দরে উত্থান-পতন মিশ্রাবস্থা ছিল। খাতগুলোর শেয়ার দরে উত্থানের একই চিত্র ছিল পুঁজিবাজার সিএসইতে।
গত দুই কার্যদিবস (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) বড় পতনের পরদিন তিন কার্যদিবস ধরে (রবিবার, সোমবার ও মঙ্গলবার) উত্থানে রয়েছে পুঁজিবাজার। এদিন (মঙ্গলবার) ডিএসইতে এদিন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৮৩ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার। এ ধরনের লেনদেন ৫৬ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ হিসেবে গন্য হয়। এর আগে ১০ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২৯০টি বা ৭৫ দশমিক ৯২ শতাংশ, কমেছে ৩৬টি বা ৯ দশমিক ৪২ এবং পরিবর্তন হয়নি ৫৬টির। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৫ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৪৯ দশমিক ২৩ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৩০ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ১৫ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ২৩৪ দশমিক ২০ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ৩৬২ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে।
এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন বেক্সিমকো ৯০ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফরচুন সুজ ৮৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৫৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা, সোনালি পেপার ৪৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, মালেক স্পিনিং ৪২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং ২৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা, আইপিডিসি ২২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ১৯ কোটি ১২ লাখ টাকা, কেডিএস এক্সেসরিজ ১৮ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং শাইনপুকুর সিরামিকস ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
সিএসইতে গতকাল মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস সোমবার লেনদেন হয়েছিল ১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৯৭টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৯৩টি বা ৬৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ, কমেছে ৩৭টি বা ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং পরিবর্তন হয়নি ৬৭টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২০৬ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩১৮ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে।
এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ১৪ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৮৭ দশমিক ৫০ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ১২৩ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ১২ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩৪১ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৪২ দশমিক ৪১ পয়েন্টে, ১০ হাজার ৯৭৫ দশমিক ৪০ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ১৫৫ দশমিক ৮২ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন বেক্সিমকো ১ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিবিএস কেবলস ৬৮ লাখ টাকা, মালেক স্পিনিং ৬৮ লাখ টাকা, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স ৪৫ লাখ টাকা, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স ৪৪ লাখ টাকা, ফরচুন সুজ ৪১ লাখ টাকা, ড্রাগন সোয়েটার ৩৯ লাখ টাকা, সাইফ পাওয়ারটেক ৩৮ লাখ টাকা, কাসেম ইন্ডাস্ট্রিজ ৩৬ লাখ টাকা এবং ফু-ওয়াং ফুড ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টারা বলছেন, বিভিন্ন সমস্যায় ঈদের (ঈদুল আযহা) পর থেকেই পুঁজিবাজার নিম্নমুখী। ঈদের পরে টানা ৯ কার্যদিবস ধরে পুঁজিবাজার পতন। সেই পতন হঠাৎ করেই দুই কার্যদিবস সামান্য উত্থানে ফিরেছিল। সেই উত্থান ধরে রাখতে পারলো না। ফের নেমে আসলো পুঁজিবাজারে পতন। দীর্ঘ পতন পর হঠাৎ উত্থানে আসায় কিছু শান্তি পেয়েছিল বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বিদায়ী সপ্তাহে শেষ দুই কার্যদিবসে (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) বড় ধরনের পতনে তাদের সেই শান্তিতে বড় ধরনের ছেদ পড়েছিল। এ ধরনের পতন বিষয়টি চরমভাবে ভাবিয়ে তুলেছে বিএসইসিকে। ফলে গত বৃহস্পতিবারে পতন থেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বাঁচাতে শেয়ার দর পতনের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ঠিক তা পরেরদিন গতকাল রবিবার বড় উত্থান হয়েছিল পুঁজিবাজারে। সেই উত্থান ধারা সোমবার ও মঙ্গলবারেও অব্যাহত আছে। ফ্লোর প্রাইস নির্ধারন পরের তিন কার্যদিবস এ ধরনের উত্থানকে স্বাগত জানালেন সংশ্লিষ্টারা।
মন্তব্য করুন