পৃথিবীর ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত কাশ্মীর বৃটিশ উপনিবেশিক আমলেও স্বাধীন ছিল। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলমান শাসকরা এখানে শাসন করেন।
১৩৩৯ সালে শাহ মীর কাশ্মীরের প্রথম মুসলিম শাসক হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। তার প্রতিষ্ঠিত শাহ মীর রাজবংশ পরবর্তী পাঁচশ বছর কাশ্মীর শাসন করে। পরবর্তীতে মুঘল সম্রাটরা ১৫৮৬ সাল থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত এবং আফগান দুররানী সম্রাটরা ১৭৪৭ সাল থেকে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর শাসন করেন। ১৮১৯ সালে রঞ্জিত সিংহের নেতৃত্বে শিখরা কাশ্মীর দখল করে।
১৮৪৬ সালে প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে শিখরা পরাজিত হলে অমৃতসরে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এই চুক্তি অনুসারে জম্মুর রাজা গুলাব সিংহ অঞ্চলটি ব্রিটিশদের কাছে থেকে কিনে নিয়ে কাশ্মীরেরও শাসক হন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তাঁর বংশধরগণ ব্রিটিশ রাজমুকুটের অনুগত শাসক হিসেবে কাশ্মীর শাসন করেন।
১৯৪৭ সালের আগস্টে বৃটিশদের ক্ষমতা ছাড়ার পরও কাশ্মীর স্বাধীন ছিল। কিন্তু ওই বছরের ২২ অক্টোবর কাশ্মীরে পাকিস্তানের পশতুন উপজাতিদের হামলা শুরু হলে সে সময়ের মহারাজা হরি সিং দিল্লীতে তার প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়ে সামরিক সহায়তা চান। দিল্লীর সরকার তাকে ভারতে অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে সই করতে বাধ্য করে। চুক্তি অনুসারে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিয়ে সহায়তা করবে ভারতের সেনাবাহিনী। তবে পরবর্তীতে গণভোটের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের জনগণ নিজেরাই ঠিক করবে তারা ভারতের সঙ্গে চলে আসবে না-কি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকবে।
১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর মহারাজা হরি সিং এই চুক্তি সই করার পরদিনই ভারতের সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাশ্মীরে প্রবেশ করে। সেই যে কাশ্মীরের মাটিতে পা রাখে ভারতের সেনাবাহিনী, তারা আর পেছনে আসেনি। এর পাঁচ বছরের মাথায় কাশ্মীরের রাজতন্ত্র বাতিল করে দেয় ভারত। এর পর ধীরে ধীরে অঞ্চলটিকে গোগ্রাসে গিলে নেয় তারা।
তবে হরি সিং এর সহায়তা চাওয়ার অনেক আগে থেকেই সুযোগের অপেক্ষায় তক্কে তক্কে ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। তারা ভারত ভাগের বেশ আগে থেকেই অন্যান্য করদ রাজ্যকে ভারতে অন্তর্ভুক্তিতে চাপ দেওয়া হয়। তখন কাশ্মীর তাতে সাড়া না দিলেও ভারত সরকার অনেকটা নিশ্চিত ছিল এক সময় ঠিকই তারা সাড়া দেবে। তাই ১৯৪৭ সালের ১৭ অক্টোবর ভারতে সংবিধানে কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া সংক্রান্ত ৩৭০ ধারাটি সংবিধানে যোগ করে।
১৯৪৭ সালে বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত অপর দেশ পাকিস্তান অতির্কিত হামলা চালিয়ে কাশ্মীরের একটি অংশ (প্রায় ৩০ শতাংশ) দখল করে নেয়। দখলকৃত অংশের নাম দেওয়া হয় আজাদ কাশ্মীর। সে সময় ভারত জাতিসংঘের শরনাপন্ন হলে সিদ্ধান্ত হয়, কাশ্মীরে একটি গণভোটের আয়োজন করা হবে। আর এই গণভোটে কাশ্মীররা নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন, তারা কারো সঙ্গে থাকবেন নাকি স্বাধীন থাকবেন। কিন্তু সেই গণভোট আর হয়নি। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট কাশ্মীরে গণভোট হলে ফল নিজেদের পক্ষে আসবে না, সেটি বুঝতে পেরে ভারত আর এ পথে পা বাড়ায়নি।
অন্যদিকে কথিত আজাদ কাশ্মীরের কাশ্মীরিরাও স্বাধীনতা পায়নি। পাকিস্তানের বিভিন্ন সরকার তাদের নিয়ে খেলতে থাকে। কাশ্মীরের স্বাধীনতার নামে পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের করতলে নিতে উস্কে দেওয়া হয় ধর্মীয় জঙ্গীবাদ।
মন্তব্য করুন