- হিমাগার তৈরির দাবি চাষিদের
প্রায় ৩শ বছরের পুরনো বগুড়ার মহাস্থান সবজির বাজার। প্রতিদিনই এই বাজারে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক সবজির সরবরাহ হয়। সকাল থেকেই আশপাশের এলাকা এবং পাশর্^বর্তী উপজেলাগুলি থেকে সবজি আসতে থাকে এই পাইকারি বাজারে। প্রতিদিন এই বাজার কেন্দ্রিক লেনদেন প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা।
মাঝে মধ্যে এই বাজারে লোকসান দিয়ে কৃষকদের সবজি বিক্রি করতে হয়। তাই এলাকার কৃষকদের দাবি একটি সবজির হিমাগার নির্মাণের। যাতে করে কৃষকদের সবজিতে লোকসান দিতে না হয়। বগুড়া শহর থেকে ১২ কিলোমিটিার উত্তরে বগুড়া রংপুর মহাসড়কের পাশের্^ মহাস্থান গড় এলাকায় প্রায় ৩ একর জমির উপর এই প্রাচীন সবজির বাজার অবস্থিত। বগুড়া সদর শিবগঞ্জ, গাবতলী সোনাতলাসহ আশপাশের এলাকাগুলো থেকে কৃষকদের উৎপাদিত সবজি সরবরাহ হয় এই বাজারে। মৌসুম অনুযায়ী পটল, করলা ঝিঙা, ঢেড়শ, বরবটি, লাই মিষ্টি কুমড়া, বাধা কপি, ফুল, কপি, আলু, মরিচ, পিঁয়াজ, রসুন, আদাসহ সব ধরনের সবজিই পাওয়া যায় এই পাইকারি বাজারে।
প্রতিদিনই দূর-দূরন্ত জেলাগুলি থেকে সবজি ক্রেতারা আসেন এই সবজির পাইকারী বাজারে। ট্রাকে ট্রাকে সবজি কিনে নিয়ে যান তাদের নিজস্ব মোকামে। ব্যবসায় লাভবান হওয়ায় পাইকাররা এই বাজারকেই বেছে নেন।
ঢাকার সবজির পাইকারি ক্রেতা জয়নাব আলী জানান, এখানে পরতা মত সবজি কিনলেও এখন রাস্তায় খরচ বেড়ে যাওয়ায় আগের মত লাভ থাকছে না। তিনি কারওয়ান বাজার এবং যাত্রাবাড়ীর সবজির মোকামে সবজি দেন প্রায় দু’বছর হলো। এতে কখনো ভালই লাভ থাকে কখনোবা লোকসান গুনতে হয়। ট্রাক ভাড়া বৃদ্ধির কারণে তাদের তেমন লাভ থাকছে না।
শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা এলাকার সবজি চাষি ইয়াকুব খলিফ জানান, তিনি সব মৌসুমের সবজি চাষ করে থাকেন। প্রতিদিনই সবজি নিয়ে এই মহাস্থান বাজারে আসতে হয়। গত বছর মূলা চাষ করে তাকে লোকসান গুনতে হয়েছিল। এবার করলা চাষ করে তার ভালই লাভ হয়েছে। লাভ লোকসানের মধ্য দিয়ে তাদের বেচাকেনা চলে।
তবে তার দাবি, এই বাজার কেন্দ্রিক যদি সবজি সংরক্ষণের জন্য একটি হিমাগার করা যায় তাহলে বাজারে মূল্য কম এর সময় সবজি সেখানে সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করা যেত। এতে করে তাদের আর লোকসান গুনতে হত না।
মহাস্থান হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রায়নগর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন এই বাজারে প্রায় ৫ কোটি টাকার সবজি কেনাবেচা হয়। হাটকেন্দ্রিক যানজট ও অনাকাক্সিক্ষত ঝামেলা এড়াতে কর্তৃপক্ষ সবসময় সজাগ রয়েছে। এছাড়া ক্রেতা বিক্রেতার সুবিধার জন্য আমরা বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছি।
হাটের ইজারাদার রাগিবুল আহসান রিপু বলেন, ‘প্রতিবছর এই হাট থেকে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। এ অর্থ হাট উন্নয়নে ব্যায় করার কথা থাকলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পরিবেশ নিয়ে কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না’ ‘বৃষ্টির পর হাটে প্রচুর পরিমান পানি জমে থাকে। এর ফলে ক্রয়কৃত কাঁচাপণ্যগুলো অনেকটাই নষ্ট হয়। ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জমে থাকা ময়লা আবর্জনায় হাটের প্রকৃত পরিবেশ আর থাকে না’। তাই হাট ব্যবস্থাপনা কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন হাটের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা গেলে সরকার বছরে যে ৪ কোটি রাজস্ব পায় তার চেয়ে বেশী আদায় সম্ভব।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম সম্পা জানান, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও ব্যবসায়ীদের অসচেতনার কারণে ড্রেনগুলো ময়লায় অকেজো হয়ে যায়। হাট উন্নয়নে আমরা কাজ করছি, শিঘ্রই বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে’।
মন্তব্য করুন