খামারিদের নায্যমূল্য দিতে ঈদুল আজহা পর্যন্ত সীমান্তপথে বৈধ-অবৈধ সকল প্রকার গবাদিপশুর প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলেও অবাধে আসছে গরু। এতে খামারিদের কোরবানির পশুর নায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। অন্যদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পশু দেশে রয়েছে। তাই ভারত থেকে গরু আমদানির কোন কারণ নেই।
জয়পুরহাটের তরুণ গরুর খামারি রিজন জানান, ভারতীয় গরু আসা পুরোপুরি বন্ধ হলে খামারিরা সহজেই নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। তারা গবাদিপশুর নায্যমূল্য পাবে। তাই কোন অবস্থাতেই যেন বাইরে থেকে পশু না আসে। খামারিরা বাইরে থেকে গরু আমদানি বন্ধে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, গোখাদ্যের দাম চড়া। তারসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আনুষাঙ্গিক খরচ। এ অবস্থায় কোরবানিতে খামারিরা গরুর নায্যদাম না পেলে হতাশ হয়ে পড়বে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর ২৫ শতাংশ হারে গবাদিপশুর খামার বাড়ছে। বর্তমানে খামারের সংখ্যা ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৬টি। সবচেয়ে বেশি খামার রয়েছে চট্টগ্রামে। এছাড়া কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় খামার গড়ে উঠেছে। গরু-ছাগল-মহিষ-ভেড়া মিলিয়ে গবাদিপশু উত্পাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে ১২তম। তাই খামারিদের প্রত্যাশা ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হলে অচিরেই দেশ এই খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে।
রৌমারীর গরু ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে সীমান্তে ‘আরকি’ (এক ধরনের কপিকল) দিয়ে যে গরু আসত সেটা বন্ধ আছে। তবে গরু আসছে ব্রক্ষ্রপুত্র নদী দিয়ে। নতুন বন্দর কালাপানি এলাকার ধরনী নদী দিয়েও গরু আসছে।
তারা জানান, দুইটা গরু একসাথে বেঁধে নদী দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। এখন যেসব গরু আসছে তা সবই বড় গরু। কারণ সীমান্তে ‘আরকি’ দিয়ে ছোট আকারের গরু আনা হতো। কারণ, ‘আরকি’ দিয়ে বড় গরু পার করা সম্ভব না। তবে এখন নদী দিয়ে বড় গরু আনা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, আগে এই সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫’শ গরু আসলেও এখন দেড়’শ থেকে দুইশ গরু আসছে। বৈধভাবে গরু আসা বন্ধ থাকায় সবই অবৈধভাবে আসছে।
অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেছেন, দেশে চাহিদার তুলনায় কোরবানিযোগ্য পশু বেশি রয়েছে। তাই দেশীয় পশুতেই এবার সব কোরবানি সম্ভব হবে। দেশের বাইরের গরু প্রয়োজন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, খামারিদের স্বার্থে ঈদুল আজহা পর্যন্ত সীমান্তপথে বৈধ-অবৈধ সকল প্রকার গবাদিপশুর অনুপ্রবেশ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন