রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে গত কয়েক মাস ধরেই চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এতে করে ভোক্তারা সস্তিতে থাকলেও ভালো নেই সারা দেশের কৃষক। গত বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনের পরও ধান বিক্রি করে খরচের টাকাও তুলতে পারেননি তাঁরা। কৃষকের ন্যায্যমূল্যের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি ধান ক্রয়, চাল রপ্তানির মতো কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে তাতেও কোনো সুফল মেলেনি। যার কারণে শঙ্কা তৈরি হয়েছে আমন ধানে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবে কি না।
রাজধানীর খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৪-৩৮ টাকার মধ্যে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত বছর মোটা চালের দাম ছিল ৪০-৪২ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ২০ শতাংশ কম দামে চাল কিনতে পারছেন ভোক্তারা। মাঝারি মানের চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২-৫০ টাকায়, যা এক বছর আগেও ছিল ৪৮-৫৫ টাকা। এ ছাড়া চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৬ টাকার মধ্যে, যা আগের বছর বিক্রি হয়েছে ৫৬-৬৬ টাকার মধ্যে।
ক্রেতারা জানিয়েছেন, চালের দাম স্থিতিশীল থাকার ফলে তাঁরা স্বস্তিতে রয়েছেন। অনেক দিন ধরেই চালের দাম বৃদ্ধি না পাওয়ায় এই স্বস্তিটা আরো বেড়েছে।
এক তথ্যে জানা যায় বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন খাদ্যশস্য প্রয়োজন হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ৩ কোটি ৭৩ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছে। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ৭৭ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসেবে দেশে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ২৭ লাখ টন খাদ্যশস্য বেশী থাকবে। এর সাথে যোগ হবে আমদানীকৃত খাদ্যশস্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ টন। তবে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৩ লাখ টন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু বোরো নয়, গত মৌসুমে আমন ও আউসের উৎপাদনও অনেক ভালো হয়েছে। আরও বলেছেন ২০১৭ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে আউস, আমন ও বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সার্বিক এ পরিস্থিতির মধ্যে মাসখানেক পরই আমন ওঠা শুরু হবে। তবে আমন ধান ওঠার পর কৃষকরা ভালো দাম পাবেন কি না তা নিয়েও এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম জানান, ‘আগামী ৩১ অক্টোবর আমাদের একটা সমন্বয় সভা হবে আমনের দাম নিয়ে। আমরা আশা করছি, আমনের বাম্পার ফলন হবে। সে অনুযায়ী ক্রয় পরিকল্পনাও তৈরি করা হবে।’ তিনি আরও জানান, ‘কৃষক যাতে না ঠকে সে বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সচেতন।’
আনন্দবাজার/শাহী
মন্তব্য করুন