কাঁচা চামড়ার দাম এতটা কমে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা, পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা পরস্পরকে দায়ী করলেও এই দুই সংগঠনের নেতাদের একটি বক্তব্য অভিন্ন। উভয়পক্ষই বলছেন, ব্যাংক থেকে এ বছর ‘টাকা’ না পাওয়াটাই কাঁচা চামড়ার দাম কমার অন্যতম প্রধান কারণ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘ব্যাংক আমাদের এবার নগদ টাকা দেয়নি। যে কারণে এবার আমরা আড়তদারদের অন্যান্য বছরের মতো টাকা দিতে পারিনি। গত বছরগুলোর মতো এবার যদি ব্যাংক আমাদের টাকা দিতো তাহলে এই সমস্যা হতো না। সাভারে স্থানান্তর হতে গিয়ে আমাদের হাতেও কোনও টাকা নেই। ব্যাংক থেকে আগের নেওয়া টাকাগুলোও সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরে বিনিয়োগ হয়েছে।’
তবে চামড়ার দাম কমে যাওয়ার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক বাজারের দামকেও আরেকটা কারণ হিসেবে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাংকের কাছে চামড়া কেনার জন্য টাকা চাইলাম। কিন্তু ব্যাংক এবার টাকা না দিয়ে আমাদের আগের ঋণগুলো রি-শিডিউল করে দিলো। ফলে ব্যাংকের খাতা-কলমে আমরা ৬শ’ কোটির বেশি টাকাও নিয়েছি বলা হলেও বাস্তবে আমরা তেমন কোনও টাকাই পাইনি। যে কারণে আড়তদারদের বিগত বছরগুলোর মতো কাঁচা চামড়া কেনার টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে এবার চামড়ার দাম পড়ে গেছে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতানও বলছেন, টাকা না থাকাটাই কাঁচা চামড়ার দাম কমার অন্যতম প্রধান কারণ। তার বক্তব্য, ‘ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের বকেয়া প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। প্রতি বছর কম-বেশি টাকা পেলেও এবার আমরা অনেকেই টাকা পাইনি। আমাদের প্রায় আড়াইশ আড়তদারের মধ্যে মাত্র ২০ থেকে ৩০ জন চামড়া কিনতে পারছেন। ফলে চামড়ার দাম পড়ে গেছে।’
চামড়ার দাম কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ ‘লবণ’:
ট্যানারি ও আড়তদার ছাড়াও এর সঙ্গে এবার আরও একটি ‘সিন্ডিকেট’ যোগ হয়েছে। সেটি হচ্ছে ‘কতিপয় লবণ ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট’। ঈদের রাতে এক বস্তা (৬০ কেজি) লবণের দাম ১২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে। অথচ এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল অর্ধেক। হুট করে লবণের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই সংরক্ষণের জন্য চামড়া কিনতে সাহস পায়নি। চামড়ার বাজারে বড় ধরনের বিপর্যয়ের এটাও একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন