উৎসবকে কেন্দ্র করে যে কোনো দেশের অর্থনীতিতে চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা যায়। আসন্ন ঈদুল আজহা দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর পবিত্র ধর্মীয় উৎসব। শুধু উৎসবই নয়, ঈদকে কেন্দ্র করে সর্বস্তরের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বেড়েছে। রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। ঈদকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ, নগদ কেনাকাটা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটে।
কিছু ব্যাংকের শাখা শুক্র ও শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়েছে। ঈদের কেনাকাটা, পশু কোরবানি ছাড়াও নানা খাতে প্রচুর অর্থের লেনদেন হয়। ফলে গোটা অর্থনীতিতে এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে। শুধু নগরী নয়, সারাদেশের হাটবাজারে কেনাকাটা করছেন সাধারণ মানুষ। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন সবাই। ঈদুল আজহার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে পশু কোরবানি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এ বছর ঈদুল আজহায় দেশে কোরবানিকৃত পশুর সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ১ কোটি ১০ লাখ। যদিও বর্তমানে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ পশু। দেশে গবাদিপশু উৎপাদন গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশেষ করে পশু কোরবানির ক্ষেত্রে চাহিদা ও উৎপাদন থাকছে প্রায় সমপর্যায়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গেল জুলাই মাসে প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২১ দশমিক ২০ শতাংশ। রেমিট্যান্সের এই পরিমাণ মাস হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বেশি অর্থ দেশে পাঠানোয় এর পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ বাড়বে। এর প্রভাব গোটা অর্থনীতিতে পড়বে।
ঈদুল আজহার বিশেষ আরেকটি দিক হলো, এই ঈদকে কেন্দ্র করে খণ্ডকালীন কিছু কর্মসংস্থান তৈরি হয়। পশুর হাট ইজারা, চাঁদিয়া, বাঁশ-খুঁটির ব্যবসা, পশুর খাবার, পশু কোরবানি ও কসাইয়ের কাজ, বিপণিবিতানগুলোয় বাড়তি জনবলের জন্য খণ্ডকালীন নিয়োগ ছাড়াও বিভিন্ন রকমের খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান হয় ঈদকে কেন্দ্র করে।
গোশতসহ ঈদের অন্যান্য রান্নাবান্না কাজে ব্যবহূত মসলা বাবদ প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে এ সময়ে। তাছাড়া লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খাতও চাঙ্গা থাকে। কোরবানির ঈদে চামড়া ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেও বড় লেনদেন হয়ে থাকে। এজন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ ঋণ দিয়ে থাকে। সারা বছরের অর্ধেকের বেশি চামড়া আসে ঈদের সময়ে। ফলে পশু চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রধান লক্ষ্য থাকে ঈদকে কেন্দ্র করেই।
ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ পবিত্র হজ পালন করে থাকেন। হজ পালন উপলক্ষ্যে বৈদেশিক মুদ্রাসহ বিপুলসংখ্যক অর্থ লেনদেন হয়ে থাকে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ জন। ফলে কয়েক হাজার কোটি টাকা এ খাতে লেনদেন হয়েছে।
ঈদের অর্থনীতিতে আরেকটি অনুষঙ্গ হলো পর্যটন খাত। এবারের ঈদুল আজহা পালিত হবে সোমবার। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। অনেকেই মাঝে একদিন ছুটি নিয়ে টানা ৯ দিন ছুটি কাটাবেন। ফলে ঈদের ছুটিতে এবার পর্যটকদের ঢল নামবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতি ঈদে কয়েক লাখ মানুষ ভ্রমণ করেন কক্সবাজার।
ঈদের সময়ে সব হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট পর্যটকে থাকে পরিপূর্ণ। পার্বত্য তিন জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির সবুজঘেরা পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে ঢল নামে মানুষের। সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ধর্মীয় স্থাপনা এবং সবুজ চা বাগান পর্যটকদের বারবার আকর্ষণ করে। তা ছাড়া কুয়াকাটা, খুলনা এবং কুমিল্লাসহ দেশের অন্যান্য জেলার দর্শনীয় স্থানে ঈদে পর্যটকের উপস্থিতি বেড়ে যায় কয়েক গুণ
মন্তব্য করুন